মুলা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মুলার চেয়ে মুলার পাতা বা শাকের গুণ অনেক বেশি। কচি মুলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় এবং খুবই মজাদার। এর পাতায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ পাওয়া যায়। সারাবছরই অল্প বিস্তর পাওয়া গেলেও শীতকালেই সহজলভ্য হয়ে ওঠে এটি। মুলা শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজের পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এতে মলিবডেনাম, পটাসিয়াম, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ ফলিক এসিড রয়েছে। মুলা শাক অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান সমৃদ্ধ। মুলা শাকের উপকারী উপাদানসমূহ শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
হজমশক্তি বাড়ায়: মুলায় থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পেটের কাজ সুদৃঢ় ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এছাড়াও আমাশয় বা ডায়রিয়ার সমস্যা দূরীকরণে সহায়ক; লিভার এবং গলব্লাডারকে ভালো রাখে। ভাত অথবা রুটি খাওয়ার সময় কাঁচা মুলা খেলে তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং রুচি বাড়ে। কচি মুলার সালাদ ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ক্যান্সার রোধ করে: মুলায় রয়েছে অ্যান্থোকায়োনিন, ভিটামিন ‘সি’ এবং ফলিক অ্যাসিডসহ নানা উপকারী উপাদান। এই উপাদানগুলি নানারকম ক্যান্সার যেমন— কোলোন, কিডনি, অন্ত্র, পেট এবং মুখের ক্যান্সার রোধে সক্ষম। এছাড়াও মুলায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে বলে ক্যান্সারের কোষ গড়ে ওঠা প্রতিহত হয় এবং ভালো কোষ তৈরি হতে সাহায্য করে।
প্র্রস্রাবের সমস্যা দূর করে: মুলা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে মানবদেহের বিষাক্ত উপাদান তরল বর্জ্য হিসাবে বের করে দিতে পারে। ফলে কিডনি সুস্থ থাকে এবং মূত্রথলির যে কোনো সমস্যা কমতে শুরু করে।
ওজন কমায় :মুলায় জলীয় উপাদানের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট ও রাফেজ থাকে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য মুলা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান।
রক্তচাপ সঠিক রাখে :মুলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে বলে এটি মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। কারণ পটাশিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো রক্তচাপকে সঠিক রাখা।
রক্ত পরিষ্কার করে :মুলা রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। সেইসঙ্গে লিভার ও পাকস্থলীর সব ধরনের দূষণ এবং বর্জ্য পরিষ্কার করে।
পেটে গ্যাস হলে :গুরুপাক খাবারের ফলে যাদের পেটে ব্যথা ও গ্যাস জমা হয়, তারা মুলার রসের সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাবেন।
শ্বেত রোগে :এন্টি-কারসেনোজিনিক উপাদানসমৃদ্ধ মুলার বীজ আদার রস এবং ভিনেগারে ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে টানা কিছুদিন লাগালে সুফল পাওয়া যায়।
ত্বকের যত্নে :ত্বকের যত্নে মুলা দারুণ উপকারী। কারণ, মুলার মধ্যে ভিটামিন ‘সি’, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স থাকে। ফেসপ্যাক হিসাবেও মুলা মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ব্রণ, ত্বক ফেটে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় :নানা কারণে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে। মুলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় এই ধরনের সমস্যা সহজে শরীরকে কাবু করতে পারে না। ফলে শরীরে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও দূর হয়।
ডায়াবেটিস রোধ করে :মুলার মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম থাকায় মুলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় না। এছাড়াও মুলা রক্তে শর্করাকে মিশে যেতে সাহায্য করে বলে রক্তে কখনোই সুগারের মাত্রা বেশি হয় না।