পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সরকারি জলাশয় দখল নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের দাসবেলাই গ্রামে বেলাল হোসেন গ্রুপ ও হাফিজুর গ্রুপের মধ্যে বুধবার সকালে এই সংঘর্ষ হয়। তবে হাফিজুরের গ্রুপের লোকজনের দাবি, তাদের পক্ষের এক ব্যক্তির স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে তাদেরকে রক্তাক্ত করেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দাসবেলাই গ্রামে প্রায় দেড় একর আয়তনের সরকারি জলাশয় দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের মসজিদের নামে ডিসিআর কেটে ভোগ দখল করা হয়। মসজিদের কমিটির পক্ষে নেতৃত্ব দেন গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন। কিন্তু এবছর এপ্রিল মাসে হাফিজুর গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য জলাশয়টি ইজারা নেয়। একারণে বেলাল গ্রুপের সঙ্গে হাফিজুর গ্রুপের বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় বেলাল গ্রুপের লোকজন হাফিজুরের লোকজনকে পুকুর থেকে মাছ ধরতে নিষেধ করেন। তবে নিষেধ অমান্য করে দুইদিন আগে হাফিজুরের লোকজন জলাশয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। একপর্যায়ে বুধবার সকালে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক লোকজনের মধ্যে লাঠিসোটা সহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এতে বেলালের পক্ষের চারজন ও হাফিজুরের পক্ষে নয় জন আহত হয়। এদের মধ্যে হাফিজুরের পক্ষের তোরাব (৭৫) ও তার ছেলে ফজলু (৪০) মুমূর্ষ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছে।
তবে হাফিজুরের পক্ষের দাবি, বেলালের গ্রুপের মহিদুল নামে এক ব্যক্তি তাদের এক সদস্যের স্ত্রীকে উত্যক্ত করত। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় বেলালের লোকজন তাদের উপর হামলা করে। এদিকে উত্যক্তের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওই নারী। তবে থানা পুলিশের ভাষ্যমতে, নারীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় এই সংঘর্ষ ঘটেনি। সরকারি জলাশয় দখল নিয়েই মূলত সংঘর্ষ ঘটেছে।
দাসবেলাই গ্রামের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, হাফিজুর রহমানের লোকজন ডিসিআর কেটে সরকারি জলাশয় ভোগ দখল করতে যান। তবে বেলাল হোসেনের বাধার মুখে জলাশয় দখল করতে পারেননি হাফিজুরের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে ঝামেলা চলছে। এক পর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি (তদন্ত) নাজমুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারি জলাশয় দখল করা নিয়ে গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১৩ জন আহত হয়েছে। তবে দুই জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং হাসপাতালে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। তবে একজন নারী তাকে উত্যক্ত করার ঘটনা উল্লেখ করে সংঘর্ষ হয়েছে বলে ভাঙ্গুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তাই তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।