রাশিয়াতে মেট্রো রেলে উঠেিেছলেন তাজাকিস্তানের এক যুবক। আচমকাই সহযাত্রীরা দেখেন মুখে মাস্ক পরা ঐ যুবক রীতিমত খিঁচুনি দিয়ে কামরায় পড়ে যাচ্ছেন, বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন আবার উঠছেন। তার বন্ধুরা তখন বলছেন সে করোনায় আক্রান্ত। যাত্রীরা তখন আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করার উপক্রম। পরে অবশ্য জানা যায় ঐ যুবকটি করোনা নিয়ে মশকরা করছিলেন। তিনি একটি প্রাঙ্ক ভিডিও বা মশকরা ভিডিও তৈরি করছিলেন করোনাভাইরাসকে নিয়ে। জাবোরোভ নামক ঐ যুবককে রাশিয়ান পুলিশ আটক করে। তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। যাতে তার ৫ বছরের জেল হতে পারে।
বৈশি^ক মহামারি কোন রোগ নয় এটা ¯্রফে গুজব। এমন কোন ভাইরাস যদি থেকেও থাকে তবে তা তরুণদের কাবু করতে পারবেনা। এমন ধারণা থেকে তারা ক’জন বন্ধু মিলে আয়োজন করেছিলন, কোভিড-১৯ পার্টি। আর সেই পার্টিতে যোগ দিয়ে ৩০ বছর বয়সি এক তরুণ আক্রান্ত হয়েছেন এবং শেষে প্রাণই দিয়েছেন ভাইরাসটির কাছে হেরে গিয়ে। জাগো নিউজ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক গত ১৩ জুলাই এই খবরটি প্রকাশ করে। খবরে বলা হয় যুক্তরােেষ্ট্রর টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সান আন্তোনিও শহরে ঘটেছে এই ঘটনা। শহরের মেথডিস্ট হসপিটালের চিফ মেডিকেল অফিসার জেইন অ্যাপ্লেবির বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এখবর দিয়েছে। করোনাভাইরাসে বিশে^র মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটির তরুণদের একাংশ মনে করেন এ ভাইরাস তেমন কিছুই না। এতে তরুণদের কিছু হবেনা।
জেইন অ্যাপ্লেবি বলেন, ওই তরুণ মনে করেছিলেন যে এই ভাইরাস গুজব। মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাহাকার করলেও ওই তরুণ ও তার বন্ধুরা পার্টির আয়োজন করে লোকজনকে দেখাবে যে তারা করোনা পার্টির আয়োজন করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা ঘটলো তা হৃদয় বিদারক। চিকিৎসাধীন ওই তরুণ তার নার্সকে অন্তিম মূহুর্তে বলেছিলেন, আমি মনে হয় ভুলই করে ফেল্লাম।
করোনায় বিপর্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে নিউইয়র্ক শহর। এই সংকটকালেও কিছু নির্বোধের কর্মকান্ডে রীতিমত শোরগোল পড়েে গেছে দেশটিতে কোভিড-১৯ পার্টির কারণে। কী এই কোভিড-১৯ পার্টি? প্রশ্নের উত্তর শুনলে রীতিমত চমকে উঠতে হয়। করোনায় সংক্রমিত হবার জন্য আহবান জানিয়ে করোনা পার্টির আয়োজন করা হয়। তাদের উদ্দেশ্য, পার্টিতে যোগদানকারি সবার আগে কে করোনায় সংক্রমিত হয় তা দেখা। যার শরীরে সবার আগে করোনাভাইরাস প্রবেশ করবে সে পাবে মোটা অঙ্কের পুরুস্কার। এমন পাটির খবরে তদন্ত শুরু হয়েছে সেখানে। সিটি কাউন্সেলের সদস্য সোন্নাম্যাককিন্সট্রি জানান, কে আগে করোনা সংক্রমিত হবে তা নিয়ে রীতিমত বাজি ধরা হয়। আয়োজনটাও অদ্ভুত। একটা মাটির কলসে পার্টিতে আসা সবাই একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখেন। তারপর করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করতে হয় তাদের। তারপর চলে টেস্ট। দেখা হয় কে কার আগে আক্রান্ত হয়েছেন। যিনি সবার আগে সংক্রমিত হবেন তিনি ওই কলসের টাকা পাবেন। জানা গেছে অভিযুক্তরা সবাই আলাবামা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। (সুত্র: সময় ডেস্ক- ৭ জুলাই-২০২০)।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সারা বিশে^র যখন নাভিশ^াস অবস্থা তখন এই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে জুয়া খেলা চলছে অবৈধ জুয়ার ওয়েবসাইটগুলোতে। সিঙ্গাপুরের সংবাদ মাধ্যম নিউ পেপার এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে। পত্রিকাটি জানিয়েছে,জুয়ার ওয়েবসাইডগুলোতে করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা নিয়ে একাধিক বিকল্প দেওয়া থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আগের দিনের তুলনায় করোনায় আক্রান্তোর সংখ্যা বাড়বে কিনা? এধরণের অন্তত পাঁচটি ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জুয়াড়িদের কাছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বাজি ধরার প্রস্তাব দিচ্ছে সাইটগুলো। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনিদাসা উইনস্লো বলেন, এমনকি এরা মানুষের জীবন নিয়েও জুয়া খেলে, কেউ যদি বাজি ধরতে রাজি হয় তাহলে তারা তাই করবে। প্রতিদিনের কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সংখ্যার ওপর বাজি ধরা কুৎতসিত বিষয়। তবে তাদের দাবি অনুযায়ী জুয়াড়ির কাছে এটি ¯্রফে খেলার দক্ষতা দেখানোর একটি পথ। সিঙ্গাপুর পুলিশের এক মুখাত্র বলেছেন, কোভিড-১৯ এ প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বাজি ধরার বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরেছে। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
বৈশি^ক মহামারি করোনাকালের জীবন ধারায় বিভিন্ন দেশে অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে। ভারতের পুনে জেলায় একব্যক্তি সোনার মাস্ক পরে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছেন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক পরা বধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অফিসে, বাজারে, শপিংমলে কিংবা মন্দির চত্তরে, সর্বত্র মাস্ক পরাটাই এখন নিউ নর্ম্যাল। অনেকেই মাস্কে ডিজাইন করেছেন, আনছেন অভিনবত্বও। কিন্তু সব ছাপিয়ে এখন সকলের মুখে মুখে একজনেরই নাম শোনা যাচ্ছে। পুনে জেলার পিম্পরি-ছিনছওয়ার্ডের বাসিন্দা শংকর কুরাদে। করোনার সুরক্ষা কবচ হিসেবে নিজেই তৈরি করে ফেলেন সোনার মাস্ক। এই বাজারে যার মূল্য ২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
এএনআইএর একটি সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, গোটাটা সোনার তৈরি হলেও বেশ পাতলা। এরই মধ্যে কিছু ছিদ্র রয়েছে , যার ফলে শ^াস-প্রশ^াসে কোন অসুবিধা হবার নয়। তবে কতটা কার্যকর ক্ষমতা তা আমি নিশ্চিত নই।’
ভারতের এই বাংলার কাঁচরাপাড়ার এক ব্যক্তি আজব এক মাস্ক বানিয়েছেন। সেই মাস্ক আলোয় মোড়া। অন্ধকারে আলো দেখাবে সেই মাস্ক। এমন নতুনত্বে ভরপুর সেই মাস্ক তৈরি করে কাঁচরাপাড়ার গৌরনাথ বলেছেন, ‘‘ সবে বানিয়েছি, মানুষকে সতর্কতার বার্তা দিতেই তৈরি করেছি এই মাস্ক।’’
করোনাকালের জীবনধারায় এ সংখ্যায় বেশ কিছু অদ্ভুত অদ্ভুত বিষয় নিয়ে আলোচনা। তাই গোচনার কথাই বা বাদ যাবে কেন। দক্ষিণ এশিয়ার দোকানগুলোতে ‘গো মুত্র’ নামেই বিক্রি হয় এটি। যেখান থেকে একটি বোতলও কিনেছেন বিবিসির সংবাদদাতা। তবে সেসব দোকানে অন্যসব সাধারণ খাবার বিক্রির পাশাপাশি এটি বিক্রি হয়ে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন আমরা গরুর দুধ ও গোমুত্র পান করি বলে সুস্থ থাকি। শুধু তাই নয় সুস্থ থাকার জন্য গোমুত্র শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে। এসময় দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমি গরুর কথা বল্লে অনেকের শরীর খারাপ হয়ে যায়্। লকডাউন খোলার পরই মদের দোকানগুলো খুলে দেওয়া হয়। তার জেরে কি হয়েছে দেখতে পাচ্ছেন তো। যারা মদ খায় তারা খাবে। আমরা গোমুত্র ও গরুর দুধ পান করবো।’ (সুত্র: জাগো নিউজ-১৭ জুলাই, ২০২০.) । (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।