একজন আলোকিত মানুষ “কবি নুরুজ্জামান সবুজ”


আদিকাল থেকেই চলে আসছে সাদা আর কালোর পার্থক্য। জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডে মানুষের সাদা-কালো মনের পরিচয় সহজেই মেলে। ভালো কাজ যেমন মানুষকে আনন্দ দেয় তেমনি মন্দ কাজ করে ব্যথিত। বর্তমান এ সভ্য সমাজে কালো মানুষের সংখ্যা যেন বেড়েই চলছে! সমাজের প্রতিটি শাখায় কালো মানুষগুলোর জয়জয়কার! পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানেই তাদের কর্তৃত্ব! কালো মানুষ নামের এ দানবগুলোর হিংস্র থাবায় সমাজের সাদা নরম হৃদয়ের মানুষেরা আজ নিষ্পেষিত।

আমাদের এ সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক সাদা মনের আলোকিত মানুষ। তাঁদের কর্মের মাঝে তাঁরা যেমন নিজেদের করেছেন আলোকিত তেমনি তাদের ছোয়ায় অন্যরা খুঁজে পেয়েছেন আলোর পথ। তেমনি একজন আলোকিত মানুষ কবি নুরুজ্জামান সবুজ। পেশায় তিনি একজন স্কুল শিক্ষক।

১৯৭১ সালে ১৫ জানুয়ারি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রত্যন্ত খানমরিচ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. তোফাজ্জল হোসেন, মাতা মোছা. নূরজাহান বেগম । গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ১৯৮৭ সালে ময়দানদিঘী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৮৯ সালে উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপিঠ হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯১ সালে বিএ পাস করেন। পরে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দাওয়া’হ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন।

মানুষ গড়ার কারিগর নরম হৃদয়ের এ মানুষটিকে হয়তো আমরা অনেকেই চিনি শুধুই একজন স্কুল শিক্ষক হিসাবে। কিন্তু তার ভিতরে রয়েছে অন্য আরেক মানুষ! যা আমাদের অনেকের অজানা। মুক্ত চিন্তার অধিকারি এ মানুষটি একাধারে একজন কবি, গীতিকার, সংগঠক, সাংবাদিক ও আদর্শ শিক্ষক। বর্তমানে তিনি উপজেলার পরমান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ২৬ বছর শিক্ষকতা জীবনে তিনি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন।

সাহিত্য জগতে তার আনাগোনা ছাত্রজীবন থেকেই। তার লেখা ‘পথের দিশা দেখালো যারা, চলনবিল থেকে বলছি, মেঘে ঢাকা চাঁদ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া নিঃস্বর্গে নির্ঝর, শতকলি, মায়ের অহংকার, একমুঠো রোদ, চলনবিলের কবি ও কবিতা তার যৌথ কাব্য গ্রন্থ। এছাড়া তার সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা ২৭টি। তার অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ আপোষহীন লড়াই, শুধু দুঃখ শুধু কান্না, এখনো উঠেনি সূর্য ও প্রেমকাব্য।

সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বেশ কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি সাপ্তাহিক ‘চলনবিলের আলো’ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘দিগন্ত’ ও ষান্মাসিক ‘ঝর্ণা’ তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার ও চলনবিল সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা। আলোকিত এ মানুষটি উত্তরবাংলা সাংস্কৃতিক পরিষদ, বাংলাদেশ কবিতা ক্লাব, ঝর্ণা সাহিত্য পরিষদ, মুক্তি জনকল্যাণ সংঘ, নতুন সূর্য একাডেমী, পাবনা জেলা সাহিত্য পরিষদ ও চলনবিল সাহিত্য কুঠিরসহ নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন।

সাহিত্য জগতে তার বিশেষ অবদানের জন্য তিনি লাভ করেছেন সম্মাননা ও পদক। একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে তিনি ২০০৫ সালে উত্তরবাংলা সাংস্কৃতিক পরিষদ ও ২০১১ সালে সাপ্তাহিক ‘চলনবিলের আলো’ কর্তৃক সম্মাননা ও পদক লাভ করেন। চলনবিল সাহিত্য কুঠির থেকে ২০০৬ সালে, সাহিত্য সংস্কৃতি আড্ডা কেন্দ্র, বগুড়া ও কাব্য প্রকাশ শেরপুর বগুড়া থেকে ২০১৩ সালে গীতিকার হিসাবে তাক সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়া দৈনিক ‘কলম সৈনিক’ সিরাজগঞ্জ তাকে আলোকিত মানুষ সম্মাননা প্রদান করে।