বিশে^ মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের লকডাউন হওয়া বিভিন্ন স্থানের মানুষদের না খেয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব হতদরিদ্ররা চা বিক্রি করে দিনাতিপাত করতো তাদেরকেও এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সরকারি নির্দেশ মেনে চলতে গিয়ে চা দোকানীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের ঘরে নেই একটি টাকাও। শ্রম বিক্রি করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়েই কিছু টাকা রোজগারের জন্য পুনরায় চা বিক্রিতে ঝুঁকেছেন অনেকে। এদিকে সরকারের সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশপাশি ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর থানা পুলিশের সদস্যবৃন্দ।
করোনা প্রতিরোধে এলাকার মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে থানার গেটে বেসিনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল, জীবানুনাশক স্প্রে, মাইকিং ও সাহায্য প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। তারপরও শহরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া গ্রামের এক চা দোকানী পেটের দায়ে চা বিক্রি করছিলেন। হঠাৎ থানা পুলিশ সাহায্য নিয়ে তাদের সামনে উপস্থিত হয়। এসময় থানার এসআই মো. শহীদুল ইসলাম চা দোকানীর অবস্থা দেখে মর্মাহত হয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সম্প্রতি তার এই স্ট্যাটাসে এলাকার বিভিন্ন মানুষ ও সংগঠন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের বাড়ি বাড়ি।
এসআই মো. শহীদুল ইসলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, পুলিশের চাকুরী করার সুবাদে অসহায় মানুষের কষ্টগুলো দেখার সুযোগ হয়। আজ অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে চাঁচকৈড় পুরান পাড়া গ্রামে একটা চা দোকানদারকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাহায্য দিতে গিয়ে যা দেখলাম, তা বলার ভাষা নেই। দোকানে গিয়ে দেখলাম- দোকানদার চা বিক্রি করছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম নিষেধ করার পরও কেন চা বিক্রি করছেন? সে বলল- স্যার আমার এক বছরের বাচ্চা আছে, তাকে কি খাওয়াবো? বাসায় কোন টাকা নাই। খাবো কি? কথাটা শোনার পর অনেক কষ্ট পেলাম। তার সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চাটিও সামনে আসলো। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সাহায্য দিলাম। সাহায্য পাবার পর চা দোকানদারের চোখে পানি। আবারো মর্মাহত হলাম। নিজের পকেট এ খুব বেশি টাকা ছিল না। যা ছিল তা দিলাম। বাধ্য হয়ে এক বিত্তবানকে বললাম সাহায্য করতে। সেও তাকে কিছু টাকা সাহায্য করল। চা দোকানদার আর তার স্ত্রীর হাসি মুখটা দেখলাম। ভালো লাগলো খুব। দোকানদার কথা দিল যতদিন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চলবে ততদিন সে চা বিক্রি করবে না।