নাটোরে উন্নত জাতের কুল চাষে অধিক লাভ

নাটোরে স্থানীয় ভাবে জাত উন্নয়ন করে উৎপাদিত কুল চাষে অধিক লাভ ফল চাষীদের কুল বা বড়ই চাষে উৎসাহিত করছে। সেজন্য আপেল কুল বা বাউকুলের পরিবর্তে নাটোরের ৭ টি উপজেলায় বেড়ে যাচ্ছে কাশ্মিরী কুল ও বল সুন্দরী কুলের চাষ। যেখানে নারকেলি ও অন্যান্য দেশীয় কুল আকারে ছোট, কম রসালো, খেতে টক ও ফলনে কম হয় সেখানে কাশ্মিরী বা বল সুন্দরী কুল আকারে বড়, অধিক রসালো, সুমিষ্ট, পুষ্টিগুনে ভরপুর ও ফলনেও বেশি। তাই নাটোরের ফল চাষীরা এই কুল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেও বেশি।
বাগাতিপাড়ার ফল চাষী মোঃ আব্দুল বারি বাকি উপজেলার পাকা ইউনিয়নে ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ২হাজার ৫’শ টি কাশ্মিরী কুল গাছের চাষ করেন। প্রতিটি কাশ্মিরী কুল গাছ থেকে ২.৫ মণ করে কুল পান এবং প্রতি মণ ২ হাজার ৮শত টাকা করে বিক্রি করেন। ২০ লক্ষ টাকা খরচ বাদে এ বাগান থেকে তিনি ১ কোটি টাকার উপরে লাভ পাবেন বলে আশা করেন। এই জমিতে তিনি আগে পেয়ারার চাষ করতেন। পেয়ারার চেয়ে লাভজনক হওয়ায় তিনি এবছর কুলের চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন পেয়ারার চাষে একবারই ভালো ফলন হয় কিন্তু কাশ্মিরী কুল চাষে কযেকবার ফলন পাওয়া যায়। আবার এতে বিষ প্রয়োগ কম করা লাগে। পোকার উপদ্রব কম। ফলনও বেশি, খেতেও সুস্বাদু। তাছাড়া পরিচর্যাও সহজ। এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এবাগানে কিছু ছাত্র পার্টটাইম শ্রম দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালায়। আবার ফল চাষে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করছে।
কুল বাগানে কর্মরত বিপ্লব আলী বলেন এরকম বাগানে কাজ করে তিনি বেশ খুশি। বেতনও ভালো পান। বিপদের সময় অতিরিক্ত অর্থের চাহিদা থাকলে তিনি তা পান। আর কর্মের জন্য কোথাও ধর্ণা ধরতে হয় না।
পাইকারী ফল বিক্রেতা মাসুদুল ইসলাম শিপন বলেন কাশ্মিরী কুল স্বাদে মিষ্টি, আকারে বড় ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম সহ দেশের অন্যান্য বাজারে এর চাহিদা বেশি হওয়ায় অন্যান্য কুলের চেয়ে এর বিক্রি বেশি। লাভও বেশি।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুব্রত কুমার সরকার জানান হর্টিকালচারেরসাথে সংযুক্তি করে নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ফল চাষীদের কুল চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে থাকে। তাছাড়াও ফল চাষে আগ্রহী করার জন্যে প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মটিভেশনাল ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়। কিছুদিন আগে বাগাতিপাড়া ও লালপুরের ৩০ জন ফল চাষীদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও ঈশ্বরদীতে এরকম মটিভেশনাল ট্যুর দেয়া হয়েছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায় এ বছর জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে নাটোর সদরে ২৩ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৮ হেক্টর, সিংড়ায় ৩৫ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৪৫ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ২০ হেক্টর, লালপুরে ৭০ হেক্টর ও বাগাতিপাড়ায় ৪ হেক্টর মোট ২০৫ হেক্টর জমিতে কাশ্মিরী ও বল সুন্দরী কুল চাষ হয়েছে যার আর্থিকমূল্য প্রায় ২৫কোটি টাকা।