জিয়াউর প্রতিদিনই পরীক্ষাকেন্দ্রে যেত বাবার সাথে। আজ বৃহস্পতিবার তার আত্মকর্মসংস্থান বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। প্রতিদিনের মতো আজকেও তার সাথে বাবার পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিধির ইচ্ছায় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হয়েছে তাকে। পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় মাঝেমাঝেই চোখ থেকে অঝোরে ঝরেছিল পানি। খবর পেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান উপস্থিত হয়ে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে খাবার খাইয়ে দিয়েছেন। কক্ষ পরিদর্শকরা সব সময় তার খেয়াল রেখেছেন। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষার্থীর নাম জিয়াউর রহমান (১৭)। সে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের দুগ্ধ ব্যবসায়ী মকবুল হোসেনের ছেলে। জিয়াউর এবছর উপজেলার অষ্টমনিষা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে সিভিল কনস্ট্রাকশন শাখায় এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তার পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ভাঙ্গুড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ।
জিয়াউরের স্বজনরা জানায়, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মকবুল হোসেন। পরিবারের লোকজন দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকার হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে পৌঁছানোর পরই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে লাশ ভাঙ্গুড়ায় ফিরিয়ে আনা হয়। লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই জিয়াউর কাঁদতে কাঁদতে তার স্বজনদের সাথে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায়।
কক্ষ পরিদর্শকরা জানায়, জিয়াউর পরীক্ষার হলে মাঝেমধ্যেই কান্না করতে থাকে। তখন তারা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে শান্ত করে। তবে সে পরীক্ষার খাতায় সব সময়ই লেখার চেষ্টা করেছে। পিতা হারানোর বেদনা নিয়ে পরীক্ষা দিলেও সে ভালো ফলাফল করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ বদরুল আলম বলেন, পিতা হারানোর বেদনা নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হন শিক্ষার্থী জিয়াউর। পরীক্ষার হলে সার্বক্ষণিক তার খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। সে বিমর্ষ হয়ে পরীক্ষা দিলেও তাকে খাতায় লিখতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এতে সে ধৈর্য ধরে খাতায় লিখেছে।
জিয়াউরের নিকটাত্মীয় শাহরিয়ার সজল বলেন, তিন ভাই-বোনের মধ্যে জিয়াউর সকলের ছোট। ছোটবেলা থেকে সে মেধাবী। তার বাবা জিয়াউরকে প্রকৌশলী বানানোর জন্য কারিগরি শাখায় পড়াশোনা করিয়েছে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিই। এ সময় জানতে পারি সে সকালের খাবার না খেয়ে এসে পরীক্ষার কক্ষে কাঁদতে কাঁদতে বসেছে। তখন আমি তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে অনেক বুঝিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি।