রাশেদ রাজন:
মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক দুরুল হুদার বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌনহয়রানি মামলা দায়ের করে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে স্কুলটির অধ্যক্ষ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকে তাকে চাকরি ছাড়তে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার দুপুরে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে অবস্থিত একটি রেঁস্তোরায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এমন দাবি করেন।
স্কুলটির অধ্যক্ষ শফিউল আলম ও তাঁর স্ত্রী রাবির ছাত্র উপদেষ্টার অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানুর ছোট মেয়েকে বাসায় গিয়ে পড়াতেন দুরুল হুদা। সেই ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে নগরীর মতিহার থানায় দুরুল হুদাকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত ২০ অক্টোবর মামলা করেন অধ্যাপক লায়লা। ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রভাষক দুরুল হুদা বলেন, গত ১২ থেকে ১৭ অক্টোবর আমার ট্রেনিং চলছিল। ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় অধ্যক্ষ শফিউল ও অধ্যাপক লায়লা ফোন করে মেয়ের বিজ্ঞানের একটা অধ্যায়ে সমস্যা আছে বলে আমাকে তাঁর বাসায় ডাকেন। আমি গিয়ে ছাত্রীকে পড়িয়ে আসি। আমি বাড়িতে আসার পর রাত ৯টা ৪২ মিনিটে অধ্যক্ষ আমাকে পুনরায় তাঁর বাসায় ডাকেন। বাসায় গেলে অধ্যক্ষ স্যার আমাকে স্কুলের চাকরি ছাড়তে বলেন।
কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ স্যার বলেন, ‘তুমি আজ পড়াতে এসে আমার মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছ। আমার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তোমাকে সাতদিন সময় দেওয়া হল, এর মধ্যে তুমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে গ্রামে গিয়ে হালচাষ করো।’ পরে বিষয়টি আমি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে অবহিত করি।
দুরুল হুদা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ২০১২ সালের মাস্টার্স পরীক্ষায় সিজিপিএ ৪ অর্জন করি এবং মেধাতালিকায় প্রথম হই। আমি বিভাগে শিক্ষক পদে আবেদন করি। অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রী চাইছিলেন আমি যেন তাদের বড় মেয়েকে বিয়ে করি। কিন্তু আমি অন্যত্র বিয়ে করি। এতে তারা মনক্ষুণœ হন। তাই আমি যেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ভাইভা দিতে না পারি সেজন্য পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁরা আমাকে হয়রানির মধ্যে রেখেছেন। এ ঘটনার পর থেকে ছাত্রী স্কুলে যাচ্ছে না বলে অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রী প্রচার করলেও ছাত্রী ঘটনার পরেরদিনও স্কুলে এসেছে এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাতেও অংশ নিয়েছে।
রাবির সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌসও তাকে চাকরি ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গত ১৯ অক্টোবর অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস ফোন করে স্কুলের অধ্যক্ষের কক্ষে আমাকে আসতে বলেন। সেখানে গেলে অধ্যক্ষ স্যার, তাঁর স্ত্রী এবং অধ্যাপক জান্নাতুল আমার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন এবং চাকরি ছাড়ার জন্য হুমকি দেন।
তবে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ওইদিন ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে তাকে (দুরুল হুদা) ফোন করেছিলাম। কিন্তু তিনি আসেননি।
মামলার এজাহার ও ছাত্রীর জবানবন্দির মধ্যে গড়মিল আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধ্যাপক লায়লা মামলার এজাহারে ঘটনার স্থান তাদের বাড়ির স্টোর রুম এবং তখন আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেদিন পড়িয়ে ফিরে আসার সময় তার ছোট মেয়ে নিজে আমাকে দরজা খুলে দেন। জবানবন্দিতেও সে তা উল্লেখ করেছে। এছাড়াও ঘটনার স্থান বাড়ির ডাইনিং রুম বলেছে। যা অধ্যাপক লায়লার দায়ের করা এজাহারের সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া আমি যদি অশালীন আচরণ করতাম তাহলে তারা আমাকে পুনরায় বাসায় না ডেকে সরাসরি মামলা দায়ের করতেন। কিন্তু তারা ৪ দিন পর মামলা দায়ের করেছেন।
জানতে চাইলে অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। যদি মেয়ের বিয়ে দিতেই চাইতাম তাহলে তার (দুরুল হুদা) পরিবারকে জানাতাম। আর দুরুল হুদা যে সময়ের কথা বলছে তখন আমার মেয়ের বয়স ১৮ হয়নি। কাজেই বিয়ের কথাবার্তার প্রশ্নই আসে না।
তবে অধ্যক্ষ শফিউল আলমের নম্বর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।