দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ৪৬ ইটভাটার মধ্যে ১৫টি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চললেও বাকিগুলোর নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে ও কৃষিজমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। প্রশাসনের নাকের ডোগায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯৮টি, পাবলিক কেজি স্কুল ৬৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ ২১৬টি। এসব প্রতিষ্ঠানের পাশ ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে অনেক ইটভাটা। উপজেলায় আনুমানিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ হাজারের মতো।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইটভাটার কালো ধোঁয়া, ভাটার কাজে ব্যবহৃত ট্যাংকলরি দিয়ে রাস্তাঘাটের যেমন ধুলাবালির সৃষ্টি হয়, তেমনি প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ ঘেঁষে, কৃষিজমির ওপর, কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে উপজেলায় ইটভাটা যেভাবে গড়ে উঠেছে, সেভাবেই নষ্ট হয়েছে কৃষিজমি। উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ২৬ হাজার ৪৫ হেক্টর বিঘা। এসব জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটার কাজে। এতে কমেছে আবাদি জমি ও ফসলের পরিমাণ।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন। সে বলে, ‘ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া যখন চোখে-মুখে পড়ে, তখন খুবই খারাপ লাগে। চারদিকে অনেক ইটভাটা। এত ইটভাটা উপজেলায় দরকার নেই। স্যারদের অনুরোধ করব যেন এগুলো বন্ধ করে দেয়।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এজিএম সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটা শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি করছে না; বরং আমাদের ছোট ছোট শিশুদেরও ক্ষতি করছে। বিষাক্ত ধোঁয়া শিশুদের বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, কৃষিজমির যে মাটি আমরা জমিতে উপরিভাগে দেখি সেই অংশের মাটি খুবই উর্বর। এই উর্বর মাটি যদি সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে সেই জমির উর্বরাশক্তি অনেকাংশে কমে যায়; যা জমির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করবে। তাই কৃষকদের জমি থেকে ওপরের অংশটুকু না কাটার কথাও বলেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে ইটভাটা চালু করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার এবং জেলা প্রশাসক কঠোর অবস্থানে আছে। আমি আমার জায়গা থেকে তদন্ত করেছি। যারা অবৈধভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’