ওমিপ্রাজোল গোত্রের ওষুধের ওপরে আমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। যখনই পেটে কোন রকম অস্বস্তি লাগে তখনই গ্যাস-অম্বলের এই ওষুধটি খেয়ে নেই। এই হার সব রকম মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এর কারণও রয়েছে, এই ওষুধটি অ্যাসিড বেরনোর পথ আটকে দেয় বলে আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু এই ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারের কুফলও রয়েছে।
এই ওষুধ ব্যবহারের হার গ্রাম থেকে শহরে বেশি। বিজ্ঞানীদের মতে স্ট্রেস কম থাকা, কায়িক শ্রম করা ও ওজন কম থাকার কারণে গ্রামের মানুষের গ্যাসট্রিক শহুরে মানুষদের তুলনায় কম হয়৷ শহুরে মানুষও যদি জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন, তবে ওষুধের প্রয়োজনও অনেকটাই কমে যাবে।
গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় আমরা খুঁজি চটজলদি সমাধান৷ তারই ফলে এই জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার শুরু হয়েছে৷ এর মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদেরই। শরীরে এর প্রভাবে নানা ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা চিকিৎসকদেরও।
কোন কোন ক্ষেত্রে এই ওষুধের অপব্যবহার হচ্ছে তা জেনে নেওয়া যাক-
* ব্যথার ওষুধে অম্বল হলেও ভরা পেটে দু’-চার দিন খেলে কোন সমস্যা হয় না৷ কিন্তু ব্যথার ওষুধের সঙ্গে গ্যাসট্রিক-অম্বলের ওষুধ খাওয়া এখন স্বভাবে দাঁড়িয়েছে৷ গ্যাস-অম্বলের প্রবণতা না থাকলে এই ওষুধ খাওয়া একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।
* হঠাৎ অম্বলে সবচেয়ে ভাল কাজ করে লিকুইড জাতীয় ওষুধ৷ কিন্তু মানুষ খায় ট্যাবলেট-ক্যাপসুল৷ সে যতক্ষণে কাজ শুরু করে ততক্ষণে পানিটানি খেলে এমনিতেই অ্যাসিডিটি কমে যায়।
* অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে এই ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ তবুও বাড়তি সতর্কতায় আমরা এটা খেয়ে থাকি। কখনও কখনও চিকিৎসকরাও রোগীকে মানসিক আরাম দিতে এই ওষুধ দিয়ে থাকেন।
* গ্যাস-বদহজমের সঙ্গে অম্বল না থাকলে এর দরকার নেই৷ তাও এই ওষুধটি খাওয়ার চল হয়ে গেছে৷
* আলসার বা রিফ্লাক্স কমাতে ৬-৮ সপ্তাহ এই ওষুধ খাওয়ার নিয়ম৷ কিন্তু শুরু করার পর অনেকেই বছরের পর বছর খেয়ে যান৷ কখনও খান জীবনভর৷
* জীবনযাপনের অনিয়ম, খাবারে অনিয়ম, স্ট্রেস ইত্যাদি কারণে অনেকের অম্বল লেগে থাকে৷ তারা মূল সমস্যার সমাধান না করে এই ওষুধে নির্ভরশীল হয়ে যান৷
গ্যাসট্রিক-অম্বলের ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে কি কি কুফল দেখা দিতে পারে তা জানা যাক-
* এই ওষুধটি বেশি পরিমাণে খেলে অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, ভিটামিন বি১২–র ঘাটতি হতে পারে।
* কম বয়সে ডিমেনসিয়া বা চিন্তাভাবনার অসঙ্গতির সমস্যা দেখা দিচ্ছে আজকাল৷
* প্রকোপ বাড়ে অস্টিওপোরোসিস, ব্যথা-বেদনা ও হাড়গোড় ভাঙারও৷
* নিয়মিত খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে ক্ষতিকর জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে। ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে৷ শয্যাশায়ী বয়স্ক মানুষের নিউমোনিয়ার আশঙ্কা বাড়েও৷
তাই গ্যাসট্রিক-অম্বলের ওষুধটি বুঝেশুনে খাওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শের বাইরে এটি গ্রহণ না করাই ভাল।