পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মানব জাতির জন্য মহা সৌভাগ্যের দিন

   বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনায় যিনি বিশ্বের একমাত্র অধিপতি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের গভীর সান্নিধ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সত্যের বাণীতে একদিকে মূর্তি পুজকদেরকে অন্যদিকে কিতাব ধারী অধঃপতিত খ্রিষ্টধর্ম ও ইহুদী ধর্মের অনুসারীদেরকে আহŸান জানিয়েছিলেন- যিনি আল্লাহর একত্ববাদের মহান প্রচারক হিসাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন, তিনি হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী যিনি যুগ যুগান্তরের পুঞ্জিভূত পাপরাশিকে বিদুরিত করে অন্ধকারময় পৃথিবীকে আলোকিত করার জন্য অফুরন্ত প্রশান্তি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।

মহান আল্লাহ পাক নিজেকে প্রকাশ করার জন্য সর্বপ্রথম যে নূরে-মোহাম্মাদী সৃষ্টি করেছিলেন চান্দ্রমাসের ১২ রবিউল আওয়াল তারই জাহেরী প্রকাশ ঘটেছে বিধায় এই দিনটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয়ে তাকে। ঈদ অর্থ খুশি। মিলাদুন্নবী অর্থ হলো হযরত রাসুল (সা.) এর জন্ম। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ দাঁড়ায় হযরত রাসুল (সা.) এর জন্ম দিনের খুশি।
হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে জগতে যত নবী রাসুল আগমন করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই হযরত রাসুল (সা.) এর আগমনী বার্তা প্রচার করেছেন এবং তাঁর আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন।
হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আগমন সম্পর্কে বাইবেলে উল্লেখ আছে, যীশু গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি তাঁর এক ভাষণে বলেছেন, ‘‘ সেই সহায় পবিত্র আত্মা যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দিবেন, তিনি সব বিষয় তোমাদের শিক্ষা দিবেন আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি সে সব তোমাদের মনে করিয়ে দিবেন।’’ (যোহনঃ১৪ঃ২৬)। আরো উল্লেখ আছে যে, যে সাহায্যকারিকে আমি পিতার কাছ থেকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো, তিনি যখন আসবেন তখন তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন। ইনি হলেন সত্যের আত্মা যিনি পিতা থেকে বের হন ) যোহন ১৫ঃ২৬)।
বেদ পুরানের বহু স্থানে উহার উল্লেখ দৃষ্ট হয়, যেমন বলা হয়েছে-
অশ্বমাশু গারুহ্য দেবদত্তং জগত পতিঃ
আসিনা সাধু দসন মষ্টেশ্বর্য গুনান্বিতঃ
অর্থাৎ কল্কি অবতার দেবতা প্রদত্ত অশ্বে আরোহন করিবেন এবং তরবারি দ্বারা দুষ্টের দমন করিবেন। (ভাগবত পুরাণ, দ্বাদশ স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায় ১৯শ শ্লোক)। এ ছাড়া কল্কি পুরাণ ২য় অধ্যায় ২৫ শ্লোাকে বলা হয়েছে-
দ্বাদশ্যাং শুক্ল পক্ষস মাধবে মাসি মাধবম,
জাতো-দট্রাশাতুঃ পুত্রং গিতরৌ হৃষ্টমালসৌ। অর্থাৎ অন্তিম ঋষি মাধব মাসের (বৈশাখ মাস) শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে জন্মগ্রহন করিবেন। নিঃসন্দেহে ইহা মুহাম্মদ (সা.)এর জন্মগ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
হিসাব করলে দেখা যায় ৫৭০ খিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আওয়াল বৈশাখ মাস অর্থাৎ মাধব মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথি হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রমান্য গ্রন্থ ‘‘ দিঘা-নিকারায়’’ উল্লেখ আছে ‘‘ মানুষ যখন গৌতম বুদ্ধের ধর্ম ভুলে যাবে তখন আর একজন বুদ্ধ আসবেন তাঁর নাম ‘‘মৈত্রয়’’(সংস্কৃত মৈত্রেয়) অর্থাৎ শান্তি ও করুণার বুদ্ধ।’’ এখানে হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আগমনের ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
পবিত্র কালাম পাক কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ফরমায়েছেন ‘স্মরন কর যখন মরিয়ম তনয় ঈসা বল্লো হে বনি ইসরাইল, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। আমার পুর্ববর্তী তাওরাতের আমি সত্যায়ন করি এবং আমি এমন একজন রাসুলের সংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন। তাঁর নাম আহমদ।(আল কোরআন)।
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা(রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি আদম সন্তানের প্রত্যেক যুগের পর যুগ স্থানান্তরিত হয়ে এসেছি। অবশেষে এ যুগে জন্মগ্রহণ করি যে যুগে আমি বর্তমান আছি। (বুখারী ১৬৫৮, মেশকাত ৫৪৯৩)।
হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট (তখন থেকে ) খাতামুন নাবিয়ীন (শেষ নবী) ছিলাম (যখন) আদম (আঃ) কাদা ও পানির মধ্যে ছিলেন। (আহমাদ্ বায়হাকী)।
আবু সাহ্ল কাত্তান (রা.) প্রণীত আমালী গ্রন্থে সালে ইবনে হামদান সুত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু জাফর মোহাম্মদ ইবনে আলী (ইমাম মুহাম্মদ বাকের) (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সকল নবীর উপর হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর শ্রেষ্ঠত্যের কারণ কি? অথচ তিনি সকলের শেষে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি জবাবে বল্লেন, আল্লাহ তায়ালা যখন আদম (আ.) থেকে তাঁর বংশধরদেরকে রূহের জগতে এনে তাঁদের প্রত্যকের নিকট থেকে এ স্বীকারোক্তি নিলেন যে, আমি কি তোমাদের রব (প্রতিপালক) নই? তখন সর্বপ্রথম হযরতহ মোহাম্মদ (সা.) উত্তরে হাঁ বলেছিলেন। এ জন্যই সমস্ত নবীগণের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্য। যদিও তিনি শেষ নবী রূপে প্রেরিত হয়েছেন।
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী আকায়ে নামদার তাজেদারে মদীনা হযরত মোহাম্মদ (সা.) নির্দিষ্ট কোন দেশ, গোত্র বা জাতির জন্য নবী রাসুল হিসাবে আবির্ভূত হননি। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠে নবী এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সকল সৃষ্টির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন তিনি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্নিত একটি হাদীসে এ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ পাকের নিকট সকল সৃষ্টির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হলাম আমি। এতে আমার গর্বের কিছু নাই (তিরমিযী)।
বিশ্ব মানবতার মুক্তির কান্ডারী রাহমাতুল্লিল আলামীন নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পৃথিবীতে শভাগমণ মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। এর চেয়ে অধিক আনন্দদায়ক কল্যাণকর ও অবিস্বরনীয় কোন ঘটনা বিশ্ব মানচিত্রে দ্বিতীয়টি ঘটেনি। রাসুল করিম সালাøল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি ঘটনা মানুষের হেদায়েতের জন্য উজ্জল আলোক বর্তিকা।
দোজাহানের বাদশাহ আখেরী নবী মহান আল্লাহ তায়ালার হাবীব হযরত রাসুল পাক (সা.) হলেন রহমত ও বরকতের অফুরন্ত ভান্ডার। আমরা উম্মতে মোহাম্মাদী। মুসলমান হিসাবে আমরা শ্রেষ্ঠ জাতির সন্মানের অধিকারি হয়েছি। আমাদের সকলের প্রয়োজন সেই মহান রাসুল (সাঃ) এর জন্ম দিনটি শ্রেষ্ঠ খুশির দিন হিসাবে পালন করা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমাদেরকে সে তৌফিক দান করেন, আমীন। (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।