চার মাসে চল্লিশটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন ইউএনও তমাল হোসেন

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
ইউএনও মো. তমাল হোসেন। চলতি বছরের ১১ জুন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় যোগদান করেন। এরপর থেকেই একের পর এক সামাজিক আন্দোলন, বাল্যবিয়ে এবং ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এক অনন্য অবদান রেখে চলেছেন তিনি। কখনও নিজে, কখনও গনমাধ্যম কর্মীদের, আবার কখনও জনপ্রতিনিধিকে তাঁর এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করছেন। আর সকল অন্যায়কে দমন করতে সবাই প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গত ৪ মাসে ৪০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন ইউএনও তমাল হোসেন। তাঁর বাস্তবায়িত কাজগুলো বেশ ভাল চোখেই দেখছেন গুরুদাসপুরবাসী। নিজের পরিকল্পনায় উপজেলার সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে উপজেলার সর্বসাধারনের কাছে ০১৩১৫-১৭১৩৫৪ নম্বরটি বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত পেয়েছে। এমনকি বিলবোর্ডে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং কি এবং এর ফলে কি শাস্তির বিধান আছে তাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
তিনি কখনও বর যাত্রী, কখনও কনে যাত্রী, কখনও শিক্ষার্থী আবার কখনও সাধারণ মানুষ সেজে অভিযান চালাচ্ছেন বাল্যবিয়ের অনুষ্ঠানে। একদিকে বখাটেদের আইনের আওতায় এনে কারাদন্ড ও জরিমানা আদায় করছেন। আরেকদিকে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া প্রত্যেকটি মেয়ের নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার পথ সুগম করছেন। এলাকায় এখন আর তেমন বখাটের উৎপাত দেখা যায় না বললেই চলে।
তবে তিনি যোগদানের এক সপ্তাহ পরেই উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় বাল্যবিয়ে এবং ইভটিজিং বিষয়ে জনগনকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করেন। এরই মাঝে সম্প্রতি চাপিলা ইউনিয়নের ধানুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী বিউটি খাতুন নিজের অমতে এবং বয়স না হওয়ার কারনে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ নম্বরে ফোন দিয়ে নিজের বাল্যবিয়ে নিজেই বন্ধ করেন। পরে তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সাহসীকতার পুরুস্কার।
পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে করেছেন সচেতনতামূলক সমাবেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বাল্যবিয়ে বিষয়ক পেইজ ও গ্রুপ খুলেছেন ইউএনও তমাল হোসেন। তার এই অনন্য উদ্যোগ এবং অবদানের সঙ্গে থেকে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করে চলেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তমাল হোসেন বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুরে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিংয়ের পরিমানটা অনেক বেশি। যেহেতু ইভটিজিং থেকেই বাল্য বিয়ের উৎপত্তি হয়। সে কারনে আমি প্রথমে সেটাই প্রতিহত করতে শুরু করি। সামাজিক এই আন্দোলনে বেশ সাড়াও পাচ্ছি। সবার সহযোগিতায় একদিন গুরুদাসপুর উপজেলা বাল্যবিয়ে এবং ইভটিজিং মুক্ত হবে।
ইউএনও আরো বলেন, নতুন প্রজম্মের মাঝে দেশ প্রেম ছড়িয়ে দিতে এবং মাদক মুক্ত রাখতে তাদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য ইতোমধ্যে ৪২টি স্কুলের ৩’শ শিক্ষার্থী নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী দিনে তরুণ প্রজম্মকে সম্পৃক্ত করে বেশি বেশি খেলাধুলার আয়োজন করার ইচ্ছা রয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিহত করতে ইউএনও স্যারের নির্দেশে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সর্বপরি সকল অন্যায়কে দমন করতে সবাই প্রস্তুত রয়েছে।