মোঃ শাহরিয়ার রহমান সৈকত, মাভাবিপ্রবি : আজ ১২ অক্টোবর মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ২০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামে টাঙ্গাইলের সন্তোষে এ বিশ^বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ^বিদ্যালয় আইন পাশ হয় ২০০১ সালের ১২ জুলাই এবং একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর।
৫৭.৯৫ একর আয়তনের উপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ^বিদ্যালয়ে ৫ টি অনুষদের অধীনে ১৫ টি বিভাগ চালু রয়েছে। বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়ে ৫৯৩৭ জন শিক্ষার্থী, ২২১ জন শিক্ষক, ২২২ জন কর্মকর্তা ও ৩১৩ জন কর্মচারী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান হল, আলেমা খাতুন ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল নামে ৫ টি হল রয়েছে।
বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৮ সন পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র ছিল খুবই হতাশাজনক। বর্তমান সরকারের সময়ে এসে এর অগ্রযাত্রা শুরু হয়ে বর্তমানে এর উন্নয়ন চিত্র চোখে পড়ার মতো হয়েছে। ২০১৩ সনের ৩ মে প্রথম মেয়াদে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন হিসেবে যোগদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যা চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানকল্পে মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি ও চ্যান্সেলর জনাব মোঃ আবদুল হামিদ এবং পরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে সমস্যাগুলো লিখিত প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন। মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সহযোগিতায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ ২০১৬ সালে ২৫ অক্টোবর ৩৪৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকার ”মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় শক্তিশালীকরণ”-শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন লাভ করে। অনুমোদিত প্রকল্পটির আওতায় বাস্তবায়নাধীন ১২.৭৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, ১২-তলা বিশিষ্ট একাডেমিক-কাম-রিসার্চ ভবন নির্মাণ, ১০-তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক অ্যানেক্স উত্তর ভবন নির্মাণ, ২৫০ ছাত্রের জন্য নির্মাণাধীন ৩য় ছাত্র হলের অবশিষ্ঠ ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম তলার উর্দ্ধমূখী সম্প্রসারণ, ৭০০ ছাত্রীর জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট ”শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল” নির্মাণ, ৫৫০ ছাত্রের জন্য ১০-তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত ”শেখ রাসেল হল” নির্মাণ, ১০-তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ, সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ১০ তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ। ইতোপূর্বে ৫১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার ”মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় উন্নয়ন”-শীর্ষক প্রকল্পে ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের বাসভবন নির্মাণ, ২৫০ আসন ছাত্রের জন্য ”জননেতা আব্দুল মান্নান হল”, ২৫০ আসন ছাত্রীর জন্য ”আলেমা খাতুন ভাসানী হল”, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের জন্য ডরমিটরী (২০ ইউনিট) এবং নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও ৩৭ কোটি ০৫ লক্ষ টাকার “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন”-শীর্ষক গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় ৫-তলা লাইব্রেরী কাম ক্যাফেটেরিয়া ভবন, ৪০০ আসনের ”বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান হল”, ৫-তলা ৩০ ইউনিটের শিক্ষক কর্মকর্তা ডরমিটরী এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ৪-তলা ভিতে ২-তলা একাডেমিক ভবনের ৩য় ও ৪র্থ তলার উর্দ্ধমূখী সম্প্রসারণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিস্তম্ভ ও এর চত্ত্বর নির্মাণ, মুক্তমঞ্চের উন্নয়ন, বিজয় অঙ্গন চত্ত্বর নির্মাণ, ঢাকাস্ত লিঁয়াজো অফিস কাম গেস্ট হাউজ ক্রয় (শ্যামলীতে দু’টি ফ্লাট), লাইব্রেরীতে ”মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার” স্থাপন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রায় ৪০০ টি পুস্তক ক্রয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত ”প্রত্যয় ৭১” এর সম্প্রসারণ ও সংস্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আইপি ক্যামেরা-এর আওতায় আনয়ন। একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে লাইব্রেরী অটোমেশন, ই-বুক, ই-জার্নাল, আইসিটি সেল স্থাপন, ইনিস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) প্রতিষ্ঠা, রিসার্স সেল-এর মাধ্যমে শিক্ষকগণের গবেষণা পরিচালনা, বিডিরেন কতৃক ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেনসমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ) বাস্তবায়ন।
বিশ^বিদ্যালয় আইনে সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে বলে বর্ণিত আছে। মাওলানা ভাসানীর উদ্যোগে এ ক্যাম্পাসে ৪৯.১৫ একর জমির মধ্যে ১২.৯০ একর জমিতে সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামে একাধিক সরকারী (দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ইত্যাদি), স্বায়িত্ব শাসিত বা সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত (শিশু হোস্টেল, মাদ্রাসা, ভাসানী হুজুর এর দরবার হল, মুসাফির খানা, মাজার, মসজিদ ইত্যাদি), বেসরকারীভাবে পরিচালিত (ভোকেশনাল হাইস্কুল, সাধারণ হাই স্কুল, টেকনিক্যাল কলেজ, এদের আবাসিক ছাত্র/ছাত্রী হল), মন্দির, পুরাতন ঐতিহাসিক ভবন রয়েছে এবং অত্র ক্যাম্পাসে ১৫.৪০ একর জমিতে ১টি দিঘীসহ বড় বড় ৪টি পুকুর রয়েছে। অবশিষ্ট মাত্র ২০.৮৫ একর জমিতে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমুলক প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় ক্যাম্পাস অভ্যন্তরীণ রাস্তা দিয়ে পাশর্^স্ত এলাকার জনসাধারণ অবাধে চলাচল করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. ইঞ্জি: মোহাঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দূর্গা-পুজা ও লক্ষী-পুজার ছুটি থাকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিতি নিশ্চিতকরনের জন্য ১২ অক্টোবরের পরিবর্তে ২০ অক্টোবর বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসুচি নেয়া হয়েছে। জাতীয় পতাকা ও বিশ^বিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, পায়না, ফেস্টুন ও বেলুন উড়ানো, কেক কাটা ও আনন্দ র্যালীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিশ^বিদ্যালয়ের হলগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদানের পর থেকেই একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ^বিদ্যালয়ের ২০ বছরের ২০০৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত অবকাঠামোগত অবস্থান ছিল হতাশাজনক, বর্তমান সরকারের সময়ে তা চোখে পড়ার মতো। আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা শেষে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমন, বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী ও নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের ”রুপকল্প-২০২১” এবং ”সমৃদ্ধ বাংলাদেশ-২০৪১” বিনির্মানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় গ্রাজুয়েটরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ২০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শুভাকাঙ্খীদের শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণকর কর্মকান্ডে সকলকে সহযোগিতা করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।