নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের ছোট বাঁশ বাড়িয়া এলাকায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের ভাই আলমগীর হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ৮ কৃষকের প্রায় দুইশ’ বিঘা জমি চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন ওই ইউপি মেম্বারসহ স্থানীয় গ্রাম প্রধানরা। এতে দুই মৌসুমে চাষবাদ বন্ধ থাকায় কৃষকরা প্রায় ৩শ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষি বিভাগের। এদিকে আলমগীর হত্যার পর ওই মামলায় অভিযুক্ত ৫ কৃষকের বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও তান্ডব চালায় কামাল মেম্বারের সমর্থকরা। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেলেও লুটপাট হওয়া বাড়িতে উঠতে পারছেন না ৫ পরিবারের সদস্যরা। একদিকে জমি চাষ করতে না পেরে অন্য দিকে নিজ বাড়িতে উঠতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে ছোট বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ৮ কৃষক পরিবারের সদস্যরা।
সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে সিংড়ার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের সাথে মৃত তমিজ উদ্দিনের ৬ ছেলের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এই জেরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১৫জন আহত হয়। এতে ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের বড় ভাই আলমগীর নিহত হন। এরপর মৃত তমিজ উদ্দিন ও কৃষক রইচ উদ্দিনের ৫ ছেলের বাড়ি ঘরে লুটপাট করে তাদের গ্রাম ছাড়া করে ইউপি মেম্বার কামালের সমর্থকরা। আলমগীর হত্যা মামলায় মৃত তমিজ উদ্দিনের ৬ ছেলে সহ ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত তমিজ উদ্দিন ৬ ছেলে জামিনে বেড়িয়ে আসলেও তাদের এলাকায় ঢুকতে দেয়নি ইউপি মেম্বারের সমর্থকরা। গ্রামের বাইরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন পরিবার গুলোর সদস্যরা। এছাড়াও ৮ কৃষক পরিবার প্রায় দুইশ বিঘা জমিতে বোরো ও আমন মৌসুমে চাষ করতে পারেননি। লুটপাট হওয়া পরিত্যাক্ত বাড়ি গুলোর চিহৃ এখনও দেখাগেলেও কামালের সমর্থকদের ভয়ে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী কথা বলতে চাননি।
এদিকে ৮ মাস ধরে জমিতে ধান চাষ করতে না পেরে গত ২৭ আগস্ট সহযোগীতা চেয়ে আলমগীর হত্যা মামলার অভিযুক্ত ও তমিজ উদ্দিনের ছেলে অধ্যাপক আব্দুস সালাম সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের একমাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, একটি হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে ৮মাস ধরে ৫ পরিবার গ্রাম ছাড়া। আর মেম্বার কামাল হোসেনের নেতৃত্বে চালালো হয়েছে ওই বাড়ি-ঘরে লুটপাট। আর দুই মৌসুম ধরে অনাবাধি রয়েছে তাদের প্রায় ২শ বিঘা ধানি জমি। লুটে নেয়া হয়েছে ৯টি শ্যালো মেশিন, মোটর ও পুকুরে মাছ।
কৃষক লাবু মিয়ার স্ত্রী শাহানাজ বেগম বলেন, কামাল মেম্বারের তান্ডবে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তাদের ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের লোকদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। তারা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
স্থানীয় গ্রাম প্রধান মো. মিজানুর রহমান ও ফোরকান আলীর মুখের ভাষ্য, গ্রামের গুটি কয়েক কৃষকের সামান্য জমি চাষাবাদ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত সামাজিক ভাবেই নেয়া হয়েছে। এটা কারও একক সিদ্ধান্ত নয়। কারণ ওই কৃষকেরা কবরস্থানের একটি জমি দখল করে রেখেছে। তাই জমি না ছেড়ে দিলে তাদেরকে জমিতে যেতে দেয়া হবে না।
তবে ময়েজ উদ্দিন প্রামাণিক নামের অপর এক গ্রাম প্রধান বলেন, প্রায় ৮ মাস পূর্বে এলাকার একখন্ড জমি নিয়ে বিরোধে স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেনের ভাই আলমগীর হোসেন নিহত হয়। আর তার পর থেকেই ওই হত্যা মামলার আসামীদের জমি চাষাবাদ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রামে বসেই নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কামাল হোসেন একটা সম্পদ নষ্ট করা যে দেশের ক্ষতি করা স্বীকার করে বলেন, এখানে গ্রামবাসী যারা আছে ওদের সাথে কোন ভাবেই তাদের আপোষ হচ্ছে না। তাই এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কবরস্থানের জায়গা ক্লিয়ার হবে এর পরে ওদের সম্পদে ওরা চলে আসবে।
এটা কি আইনে পারেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মেম্বার বলেন, এটা আইনের কথা না। আইন কিন্তু আমার আপনার মত লোক দ্বারাই সৃষ্টি হয়। এটা একটা সমাজ এই সমাজকে মেইনটেইন করে চলতে হবে। সমাজের বাহিরে তো কেই না। এখানে দশ ঘর মানুষ একদিকে আর সত্তর ঘর মানুষ একদিনে। তাই এই গ্রামে গ্রাম প্রধানদের নির্দেশই আইন বলে জানান এই মেম্বার।
এবিষয়ে অভিযোগ কারী অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, কামাল মেম্বার এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার নির্যাতন থেকে নিরীহ কৃষক পরিবার গুলো মুক্তি চায়। তিনি প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, জমিজমা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে একটা সংঘর্ষ হয় এবং সেখানে একজন নিহত হয়। এঘটনায় থানায় একটি মামলা রয়েছে। আর কৃষকরা জমিতে যেতে পারছে না বা তারা আবাদ করতে পারছে না বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত না। তবে যদি এমন হয় তিনি খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, আবেদনটি তার নজরে আসেনি। কোন মামলা থাকলে আদালত দেখবে, পুলিশ দেখবে। কিন্তু আমার দুইশ বিঘা জমি অনাবাদি থাকবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আর এখানে প্রাথমিক ভাবে জানতে পারলাম আমার একজন ইউপি মেম্বার জড়িত। সে স্থানীয় সরকারের একটা অংশ। আমার রাষ্ট্রের উৎপাদন নষ্ট করে একজন জনপ্রতিনিধি সহযোগী না করে সেখানে উল্টো জনগনকে আরো উসকে দেয়। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। তিনি আরো বলেন আইন আইনের মতো চলবে।