রোহিঙ্গা কন্যা রাহীর পর ছোট বোন তসলিমা’রও একই পরিণতি

বড় বোন রহিমা আক্তার ওরফে রাহী খুশির পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছেন তসলিমা আক্তারও। ইতিমধ্যে কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এ ছাত্রীর ভর্তি স্থগিত করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন রেখে স্কুলে ভর্তি হওয়ার অভিযোগে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

তবে এ নিয়ে ভূক্তভোগী কিশোরী তসলিমা আক্তার ‘রোহিঙ্গা পরিচয় স্বীকার’ করে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতের জন্য ইতিমধ্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনও জানিয়েছে।

গত কিছুদিন আগে এক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থায় দেওয়া সাক্ষাৎকার প্রচার হলে তসলিমার বড় বোন রহিমা আক্তার ওরফে রাহী খুশির লেখাপড়া ও জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি নানা মহলে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মিডিয়ার শিরোনাম হয় রাহী আক্তার খুশি।

খুশির বাবার নাম মোহাম্মদ ইলিয়াস ও মায়ের নাম মিনু আরা। বিগত ১৯৯২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেয় কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বর্তমানে তারা ‘নিবন্ধিত রোহিঙ্গা পরিবারের’ সদস্য হিসেবে পরিচিত।

রহিমা আক্তার ওরফে রাহী খুশির জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা সবকিছুই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কিন্তু গত এক দশকের কাছাকাছি সময়ে বদলে গেছে তার সবকিছুই। গোপন করেছেন নিজের পরিচয়। বানিয়েছেন পিতা-মাতার নকল জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নিজের জন্মসনদ। রহিমা আক্তার থেকে হয়ে গেছেন রাহী আক্তার খুশি।

খুশি প্রথমে কক্সবাজার শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি থেকে এসএসসি পাশ করে। পরে সে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। বর্তমানে সে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এলএলবি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত।

পড়াশোনার পাশাপাশি খুশি বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সংগঠন ‘প্রথম আলো বন্ধুসভার’ জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক। এছাড়া সে ওমেন লার্নিং সেন্টার, মার্কি ফাউন্ডেশন, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের স্কাউটসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। পরে যদিও রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন রাখার অভিযোগে বন্ধুসভার সদস্য পদ স্থগিতসহ অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার কুতুব উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘রহিমা আক্তার ওরফে রাহী খুশিকে নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমে ‘জাতীয়তা ও নাগরিকত্বের পরিচয়’ গোপন করে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদে অধ্যয়নরত বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভার সিদ্ধান্তক্রমে খুশির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

তিনি বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলাকালীন রহিমা আক্তার খুশির ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।

বড় বোন রহিমা আক্তারের ওরফে রাহী খুশির মত তসলিমারও বেড়ে উঠা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেও বড় বোনের মত রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন রাখতে পিতা-মাতার ‘নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ’ বানিয়ে ভর্তি হয়েছে মাদ্রাসা ও স্কুলে।

তসলিমা আক্তারও রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন রাখতে বরাবরই হেটেছে বড় বোনের দেখানো পথে। কক্সবাজারের স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে পিএসসি পাশ করার পর ভর্তি হয় একই মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এরপর সে ওই মাদ্রাসাটির ষষ্ঠ শ্রেণি পাশ সনদ নিয়ে গত ২০১৬ সালে ভর্তি হয় কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে।

তসলিমা এখন কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। সে বড় বোন রহিমা আক্তার ওরফে রাহী খুশির সঙ্গে কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ারছড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে। যদিও তাদের রোহিঙ্গা পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রচারের পর থেকে খুশি সেখানে অবস্থান করছে না।

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রটি নিশ্চিত করেছে, একটি বিশ্বস্ত মাধ্যমে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আসে পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছাত্রী তসলিমা আক্তার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন রেখে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ বানিয়ে সে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তসলিমা আক্তার উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবারভূক্ত সদস্য বলে অভিযোগ পায় পৌর কর্তৃপক্ষ।

সূত্রটি আরো জানিয়েছে, পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত কয়েকদিন আগে পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তসলিমা আক্তারের ভর্তি স্থগিত করেছে। এ নিয়ে স্কুলটির ৩ জন শিক্ষককে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে তসলিমার ভর্তির ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের এ ধরণের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পড়ালেখার সুযোগ অব্যাহত রাখতে কয়েকদিন আগে ভূক্তভোগী তসলিমা আক্তার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বরাবর একটি আবেদন জানিয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে নির্ভরযোগ্য সূত্রটি।

এখন এ নিয়ে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, জাতীয়তা ও নাগরিকত্বের পরিচয় গোপন রেখে স্কুলে ভর্তি হওয়া তসলিমা আক্তারও কি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিয়ে বড় বোন রহিমা আক্তার ওরফে রাহী খুশির দেখানো পথ ধরেই হাটচ্ছে?