পাবনায় পালা করে গৃহবধূ ধর্ষণ, থানায় অভিযোগ না নেয়া, জোরপূর্বক থানার ভেতরে বিয়েসহ বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের নির্দেশিত পাবনা জেলা প্রশাসনের পুরো ঘটনার তদন্ত কমিটি।
রবিবার রাতে জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ তার বাসভবনে (বাংলোতে) সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পাবনার এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে তদন্ত কমিটি ‘সিরিজ রেপ’হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বলে জানান।
তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসক গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, গণমাধ্যমের প্রত্যেকটি অভিযোগ তদন্ত কমিটি আমলে নিয়ে পুঙ্খানুপঙ্খভাবে গত তিনদিন ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করে এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের পাঠানো হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ সেখান থেকেই নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে না আসলে হয়তো এ ঘটনা আলোর মুখ দেখতো না। ঘটনাটি গণমাধ্যমের কারণেই একদিকে জেলা পুলিশের শক্তিশালী তদন্ত কমিটি ঘটনাটি খতিয়ে দেখেছে। ঘটনার সত্যতা মেলায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পাশাপাশি পাবনার এই চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ ও থানার মধ্যে ধর্ষিতার সাথে এক ধর্ষকের বিয়ে দেয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আসার সাথে সাথেই মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের দৃষ্টিগোচরে আসে। গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে ঘটনা পুরো তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধান করা হয় পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজকে। বাকিরা হলেন পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবনে মিজান ও পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. একেএম আবু জাফর।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগস্ট রাতে পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামের তিন সন্তানের এক জননী ওই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদের সাথে প্রেমের সম্পর্কে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। এ সময় রাসেলসহ তার অপর দুই বন্ধু তাকে এক বন্ধুর বাড়িতে আটকে রেখে পালা করে ধর্ষণ করে। ঘটনার পরদিন ধর্ষণের শিকার ওই নারী স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টুর স্মরণাপন্ন হন এবং এই ঘটনার বিচার চান। ঘন্টু ও তার কয়েক বন্ধু মিলে তারই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে আটকে রেখে তিনদিন ধরে পালা করে ধর্ষণ করে। সেখান থেকে ওই নারী পালিয়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে সব খুলে বলে। ৫ সেপ্টেম্বর ওই নারীকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন রাতে ওই নারী পাবনা সদর থানাতে অভিযোগ দিতে আসলে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে উল্টো ধর্ষক রাসেলকে ডেকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে মামলার ৫ আসামিকে পুলিশ পর্যায়ক্রমে প্রেফতার করে।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়াটার) মো. ফিরোজ আহমেদকে প্রধান করে এবং কোর্ট ইন্সপেক্টর ও ডিআই-১ কে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রাথমিক অবস্থায় পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত ও উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাবনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।