বয়সের কাছে হার মানেননি আবুল কাসেম। জীবন যুদ্ধে তিনি অপরাজিত সৈনিক।রাজশাহীর জেলার বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের আলোকনগর গ্রামের শত বছর বয়সী এই বৃদ্ধ এখনও বাড়ি সংলগ্ন হামিরকুৎসা বাজারে একটি ছোট দোকান চালিয়ে সংসার চালান। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী ও প্রতিবেশিরা জানান, আবুল কাসেমের বয়স একশ’র কাছাকাছি হবে।
স্থানীয়রা জানান, সংসারে এক স্ত্রী ছাড়া আবুল কাসেমের আর কেউ নেই। চার মেয়েকে অনেক আগেই বিয়ে দিয়েছেন। তার অনেক নাতি নাতনীরও বিয়ে হয়েছে। তবে তাদের আর দেখভাল করতে হয়না আবুল কাসেমকে ।
বাজারের ব্যবসায়ী মঞ্জুর রহমান জানান, আবুল কাসেম খুব সকালে এসে দোকান খুলে।তার দোকান সংলগ্ন হামিরকুৎসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়ায় ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই তার দোকানে বেশি কেনাকাটা করে থাকে। বিস্কুট, চকোলেট, কেক, পাপর, চানাচুর, বাদাম ও আচার সহ নানাবিধ মুখরোচক খাবার রয়েছে আবুল কাসেমের দোকানে। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে যায় দোকানের বেচাকেনা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন আবুল কাসেম। বাড়িতে স্ত্রী অসুস্থ থাকায় দুপুরে কিছু সময়ের জন্য দোকান বন্ধ করে তাকে খাবারের জন্য বাড়িতে যেতে হয়।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী আইনাল হক জানান, খুব ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ আবুল কাসেম। কারো কাছে হাত পাতা বা সাহায্য নেওয়া তিনি পছন্দ করেন না। তিনি নিজেই রোজগার করেন।আবুল কাসেমের পুজি অনেক কম। তার উপর অনেকে বাকি নিয়ে তা আর পরিশোধ না করায় তিনি মনে মনে খুব কষ্ট পান। তার মতে কেউ যদি তার ব্যবসায় কিছু পুজি দিয়ে সাহায্য করে তবে তিনি(আবুল কাসেম) আরো ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন।
আবুল কাসেম জানান, অন্যের কাছে হাত পাততে লজ্জা করে। দীর্ঘদিন এই দোকানের আয় থেকেই কোন রকমে জীবন চলে যাচ্ছে। এখন আর চোখে দেখে টাকা চিনতে পারি না। এ কারণে অনেকে আমাকে মাঝে মধ্যে ঠকায়। ব্যবসার অবস্থা এখন আর ভাল না। দোকানে ঠিকমত মালামাল তুলতে পারি না। তাই বেচাকেনাও কম। এসব কথা বলার ফাঁকে তিনি এই সংবাদদাতা ও উপস্থিত লোকজনের কাছে বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাকে ঈমানের সাথে পরপারে নিয়ে যান।
আলোক নগর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ রাশেদুল হক বলেন, আবুল কাসেমকে দেখে পথচারীসহ অনেকেই অভিভূত হয়ে পড়েন। বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন আবুল কাসেমের চলাফেরা দেখে অনুপ্রাণিত হন। অনেকেই আবুল কাসেমের কাছে বসে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ও ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প শুনে।