ইয়ানূর রহমান : ভৈরব নদের যশোর শহরের পূর্বাংশের কাঠেরপুল থেকে নীলগঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত ৫৯ টি অবৈধ স্থাপনার মালিকদের চূড়ান্ত নোটিস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যশোর জেলা প্রশাসন। শুক্রবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ। নোটিস পাওয়ার পর ওই এলাকার দখলকারীরা নিজেরা সরে না গেলে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ইতিপূর্বে শহরের প্রাণ কেন্দ্র দড়াটানা সেতুর পশ্চিম পাশের ৮৪টি অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদের কাঠেরপুল থেকে নীলগঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত ৫৯ টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা জমা দেয়া হয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনার মালিকদের আগামী সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত নোটিস দেয়া হবে। আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নিলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। ভৈরব সংলগ্ন অন্য যে সকল স্থাপনা আছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে। উচ্চ আদালতে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণার পর যশোরে ভৈরব নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পানি আইনের ‘প্লাবন ভূমি’র নিয়ম প্রয়োগ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, পানি আইনের আওতায় ভৈরব নদে কোনো বহুতল ভবন বা অন্য কোনো ভবন পড়েছে কিনা সে বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনও আমাদের কাছে তালিকা জমা দেয়নি। পানি আইনের আওতায় কোনো ভবন যদি তালিকাভুক্ত হয় সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই চিহ্নিত করে জানাতে হবে। এ ধরনের তালিকা আসলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেছেন, ভৈরব নদ খননের জন্য সকল প্রকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলমান আছে। এজন্য পানি আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পানি আইনের ২০ ও ২১ ধারা অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। খুব দ্রুত সময়ে এ বিষয়ে কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি জানান। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে এসব স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা বলে তিনি জানান।
একাধিক সূত্রে জানাগেছে, ভৈরব নদ খনন প্রকল্পের আওতায় নদের ৯২ কিলোমিটার খননকাজ হবে। এরই মধ্যে নদের উজান ও ভাটির ৭০ কিলোমিটারের বেশি খননকাজ চলমান রয়েছে। তবে যশোর শহরাংশের চার কিলোমিটার এলাকায় খননকাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পাউবো। ঠিকাদার জটিলতার কারণে খনন কাজ ব্যহত হওয়ার কথা বলা হলেও এর পেছনে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে বলে জানাগেছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নদের ৯২ কিলোমিটার এলাকা খনন করার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে (এলজিইডি) সঙ্গে নিয়ে নদের দুই তীরে ইকো পার্ক ও ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগ নেবে পাউবো। ইতিমধ্যৌ শহরাংশে ভৈরব নদের তীরে সৌন্দর্যবর্ধন ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এসব কাজ বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে চিহ্নিত বাকি অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ না হওয়ায়।