নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:
স্ত্রীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষক রাশিদুল ইসলামকে বখাটেরা মারপিট করেছে বলে এলাকায় অভিযোগ উঠেছে। তবে বখাটেদের মারধরের শিকারের সময় অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। রাশিদুল ইসলাম রুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক। তিনি প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মেডেল’ প্রাপ্ত শিক্ষক। গত ১০ আগস্ট রাতে রাজশাহী মহানগরীর মনিচত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এই শিক্ষক অবশ্য শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নেননি। তবে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লম্বা এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি। সেখানেই বলেছেন, ঘটনার সময় আশপাশে থাকা মানুষের কাছে ‘বাঁচান’ বলে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। একপর্যায়ে ক্রোধান্বিত হয়ে ‘ও আমার বউ, গার্লফ্রেন্ড না, কাবীননামা দেখাতে হবে আপনাদের?’ বললে উল্টো বখাটেদের পক্ষ নিয়ে একজন ভিড়ের মধ্য থেকে বলে, হ্যাঁ, কাবীননামা নিয়েই চলাফেরা করতে হবে! সেদিনের সেই ঘটনার বিবৃতি দিয়ে শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম তার ফেসবুকে ওয়ালে লেখেন, মেনে নিন নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যান। এ দেশে আপানার চোখের সামনে আপনার মা, বোন অথবা বউ ধর্ষিত হলেও প্রতিবাদ করবেন না, আশেপাশে কাউকে পাবেন না। মার খেয়ে মরবেন। কারণ আপনি একটা জানোয়ার, আমিও একটা জানোয়ার, জানোয়ারে ভরা সমাজ আমাদের। তিনি লেখেন, সাহেববাজার মনিচত্বরের মত জনবহুল এলাকাতেও আমার বউ হেনস্তার শিকার হয়। এক পাল ছেলের মধ্যে একজন আমার বউকে পেছন থেকে কয়েকবার ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দেয়। দুই-তিনবার সহ্য করলেও পরেরবার প্রতিবাদ করি। ব্যাস, সোনার ছেলেদের দাপট শুরু। শেষে আমাকে সোনাদীঘি মসজিদের সামনে ৫-৭ জন মিলে ঘিরে ধরে মারা শুরু করে। এই পর্যন্ত না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু ওখানে কম করে হলেও ৫০ জন আমার মার খাওয়া দেখছিলো। একজনও এগিয়ে আসেনি। মার খাওয়ার এক পর্যায়ে আমি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলি, ‘বাঁচান আমাকে’, কোন রেসপন্স পাইনি। একজন মোটরসাইকেল থামিয়ে আমার মার খাওয়া দেখছিলো, আমি সাহায্য চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে গেলো। মার খেয়ে কাপুরুষ আমি দর্শকদের বলি, আপনারা আজ এগিয়ে এলেন না, একদিন আপনার বউয়ের সঙ্গে এমন হলেও কেউ এগিয়ে আসবে না। ও আমার বউ, গার্লফ্রেন্ড না, কাবীননামা দেখাতে হবে আপনাদের? এ সময় একজন ভিড়ের মধ্য থেকে বলে বসলো, হ্যাঁ, কাবীননামা নিয়েই চলাফেরা করতে হবে। তিনি লেখেন, ধরেন, দ্বিতীয়বার আক্রমণে ওরা আমাকে মেরে ফেলল। কি করবেন? ফেসবুকে কান্নাকাটি? জাত গেল জাত গেল রব তুলবেন? কোনোটাই করবেন না দয়া করে, এতে কিছু আসে যায় না। আর যারা করবে, তাদের গিয়ে থুথু দিয়ে আসবেন। ধরেই নিয়েছিলাম, পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরবো, মা বাবা চান না বাইরে সেটল হই। এই ঘটনার পর দ্বিতীয়বার ভাববো অবশ্যই। এ বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষক রাশিদুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশের সাথে কথা বলছি। তাই এখন কথা বলতে পারব না। তবে ওই সময় নগরীর বোয়ালিয়া থানায় গিয়ে শিক্ষক রাশিদুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ তখন জানান, ঘটনার পর থেকেই তিনি থানায় আসেননি। ওসি জানান, ওই শিক্ষকের শ্বশুর তাকে বিষয়টি ফোন করে জানিয়েছেন। এরপর তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আশপাশে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছেন। কিন্তু কিছু বুঝতে পারেননি। আর এ নিয়ে ভুক্তভোগী কোনো অভিযোগ না করায় তিনি নিজেই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ওসি বলেন, লিখিত অভিযোগ কিংবা মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের আশ্রয় না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে শুক্রবার বিকালে ভুক্তভোগী শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম বলেন, আইনের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। আসলে এখন এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। পরবর্তীতে কথা বলা যাবে