জামায়াতকর্মী মাদ্রাসা সুপার নারী কেলেঙ্কারীসহ বিস্তর অভিযোগ

চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে একইসাথে দুটি দায়িত্বে রয়েছেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দিঘইল গ্রামের বাসিন্দা জামায়াতকর্মী গিয়াস উদ্দিন আজম। তিনি নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার রহিমদী দাখিল মাদ্রাসার সুপার। একইসঙ্গে নিজ এলাকার তিন নম্বর জোনাইল ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজী)।

মাদ্রাসা সুপারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও বিষয়টি গোপন রেখে বিধি ভেঙে তিনি জোট সরকারের সময় নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের লাভজনক পদটি বাগিয়ে নেন। মাসের ২০দিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকে এলাকায় অবস্থান করে প্রায় দেড়যুগে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রচুর টাকা। এছাড়া মাদ্রাসার উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত, জাতীয় দিবস পালন না করা এবং নারী কেলেঙ্কারিসহ গিয়াস উদ্দিন আজমের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

দুটি দায়িত্ব একইসঙ্গে পালনের ব্যাপারে বগুড়ার জেলা রেজিস্ট্রার (নাটোর জেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে চাকরিবিধি অনুযায়ী একইসঙ্গে তিনি দুটি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে গিয়াস উদ্দিন আজমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গিয়াস উদ্দিন আজম ১৯৯০ সালে রহিমদী দাখিল মাদ্রাসায় সুপার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০০৩ সালের ৬ মে তারিখে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালনীন সিনিয়র সহকারী সচিব এবং নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিচালক সাক্ষরিত স্মারকে তাকে জোনাইল ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের (কাজী) দায়িত্ব দেয়া হয়।

অপরদিকে কাজীর দায়িত্ব পাওয়ার পরেই মাদ্রাসা ছেড়ে মাসের সিংহভাগ এলাকায় অবস্থান করেন গিয়াস উদ্দিন আজম। ফলে মাদ্রাসাটি পরিচালনার ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে চরম অব্যস্থাপনা। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর মাধবদী উপজেলার কাঠালিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য সীমা আক্তার সুপার গিয়াস উদ্দিন আজমের বিরুদ্ধে নরসিংদীর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তৎকালীন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরুও মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য সুপারিশ করেন।

ওই অভিযোগে সীমা আক্তার উল্লেখ করেন, তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত মাসিক বেতনের কোন হিসাব দেন না। এ খাতের বিপুল পরিমাণ টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন। একইভাবে তার বিরুদ্বে মাদ্রাসার উপবৃত্তির টাকাও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তিনি মাসের ২০দিন সময় তার নিজস্ব এলাকা বড়াইগ্রামে অবস্থান করলেও মাদ্রাসার হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেন। এছাড়া এলাকায় তিনি জামায়াতকর্মী হিসেবে পরিচিত। মাদ্রাসাতে জাতীয় শোক দিবস থেকে শুরু করে জাতীয় দিবস পালন করেন না তিনি।

গিয়াস উদ্দিন আজমের ব্যাপারে জোনাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক বলেন, কাজী সাহেব নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি মাদ্রাসাতে চাকরিরত অবস্থায় জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের সময় নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার হিসেবে নিবন্ধিত হন। উনি এলাকার মানুষ। এর বাইরে আমি বেশিকিছু বলতে চাই না।

মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নূর আলম ভুঁইয়া বলেন, নরসিংদীর মাধবদী থেকে সুপার গিয়াস উদ্দিন আজমের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম দুইশ কিলোমিটার দূরে। তিনি ঘন ঘন বাড়ি যাবার কারণে মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে চরম অসুবিধা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নারী কেলেঙ্কারির মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথেও সম্পৃক্ত তিনি।

তিনি আরও বলেন, সুপার গিয়াস উদ্দিন আজম শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনা মানেন না। ফলে অর্ধশত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসাটির শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এছাড়া তিনি মাদ্রাসায় কোন জাতীয় দিবস পালন করেন না। তিনি জামায়াতকর্মী বলে শুনেছি। তিনি মহান স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী। সুপারের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে অচিরেই পরিচালনা পর্ষদের সভা আহবান করা হবে। সভায় সুপারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদ্রাসা অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

তবে অভিযোগ আংশিক স্বীকার করে মাদ্রাসা সুপার গিয়াস উদ্দিন আজম বলেন, একসঙ্গে দুটি দায়িত্ব পালন করতে পারব না- এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যদি চাকরিবিধি পারমিট না করে তবে কাজীর দায়িত্ব কোরবানি ঈদের পর ছেড়ে দেব। আর মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাত ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাকে জামায়াতকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। আর মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় সাক্ষরের ঘটনার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট সুপারের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।