মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদেরকে হয় নাগরিকত্ব, নয় তাদেরকে নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের জন্য ভূখণ্ড দেওয়া উচিত।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দেশটির সরকার পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়া সাধারণত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তবে মিয়ানমারে যে জাতিগত গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তাতে মালয়েশিয়া চুপ থাকতে পারে না। আর এ গণহত্যার কারণে যে রোহিঙ্গা সংকট তৈরি হয়েছে তা সমাধানে মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বা আলাদা রাষ্ট্র দেওয়া।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার অবস্থান নিয়ে প্রশ্নে মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়া সব সময় গণহত্যার বিরুদ্ধে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের উচিত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উদ্যোগী হওয়া। মিয়ানমারের এই নাগরিকদের বিরুদ্ধে দেশটির সরকারের অন্যায় আচরণেরও বিরুদ্ধে অবস্থান মালয়েশিয়ার। দেশটিতে এক সময় অনেক রাজ্য ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা মিয়ানমারকে একটি রাজ্য হিসেবে শাসন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ বার্মা রাজ্যে অনেক উপজাতি ছিল।
হয় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নাগরিকদের মতো আচরণ করা, নয় তাদেরকে নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের জন্য ভূখণ্ড দেয়া উচিত বলে মাহাথির মনে করেন।
অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ বেশির ভাগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য মুসলিমদেরকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু সত্য হলো ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখল এবং আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষার ফল এ তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতের ভুমিকা নিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালত শুধু দুই দেশের অবস্থান অনুসন্ধান করতে পারে। একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে দুই দেশের সমস্যাগুলোকে সম্মান করা। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্তে মিয়ানমার সরকারের উচিত কার্যকর ভুমিকা রাখা।
সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেন, মিয়ানমার অনেকগুলো রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। ব্রিটিশরা চেয়েছিলো সবগুলোকে একসঙ্গে শাসন করতে। সেজন্যই রাজ্যগুলোকে এক করে বার্মা রাষ্ট্র গঠন করা হয়। দেশটিতে নানা গোত্রের মানুষের বসবাস। মিয়ানমার সরকারের এখন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত নয়তো আলাদা রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের (আইসিজে) সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মাহাথির বলেন, আইসিজে কেবল তখনই কাজ করতে পারে যদি এই ইস্যুতে উভয়পক্ষই আদালতের অনুসন্ধানগুলি মেনে নিতে সম্মত হয়। তবে আইসিজে যদি একতরফা সিদ্ধান্ত নেয় তবে অন্য পক্ষ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। সুতরাং, আইসিজের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের চেষ্টা থাকা দরকার।
উল্লেখ্য, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়্যিপ এরদোগানের আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বুধবার (২৪ জুলাই)দেশটিতে পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।