নাটোরের বড়াইগ্রামে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে চার শিক্ষক নিয়োগ

নাটোরের আহমেদপুর এম.এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে চার শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালের আগে সবার অগোচরে নিয়োগ প্রক্রিয়া স¤পন্ন হলেও সম্প্রতি তা জানাজানি হয়।এ বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধি।

জানা যায়, নাটোরের ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদপুর এম.এইচ উচ্চ বিদ্যালয়। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, এই বিদ্যালয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে যায় ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ, (এনটিআরসিএ) এর অধীনে।

এরপরেও গোপনে বিধি বর্হিভূতভাবে পেছনের তারিখের এক ভুয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চার শিক্ষক নিয়োগ দেয় আহমেদপুর এম.এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি নাটোর-০৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শুধাংসু সরকার।

এরপর ২০১৬ সালের ৩০ জুন শুধাংসু সরকার অবসরে যাবার সময় হলে বিদ্যালয়ের সভাপতি তাকে আরও দুই বছরের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুধাংসু সরকার অবসরে চলে যান। এরপর রবিউল ইসলাম নামে একজন প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তার মৃত্যুর পর চলতি বছরের ১৪ জুন বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আকবর আলী প্রধান শিক্ষক হিসাবে নতুন দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এর পরের দিন ১৫ জুন দীর্ঘ ৪ বছর অনুপস্থিত থাকার পর চারজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসা শুরু করেন।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এবং ১নং জোয়ারী ইউপি সদস্য ফেরদৌস আলম বলেন, এলাকাবাসী জানেনা, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানেনা, কবে পত্রিকায় সার্কুলার হয়েছে, কবেই বা নিয়োগ বোর্ড হয়েছে তা কেউ জানেনা। উনারা পূর্বের এক নিয়োগ বোর্ডের কথা বলে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে চার শিক্ষকের নিয়োগ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এবিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা চাই অভিযোগের সত্যতা বের করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক।

এদিকে সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে চার শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাদের কিভাবে নিয়োগ হলো, কেনই বা দীর্ঘ চার বছর পর বিদ্যালয়ে আগমন? এমন প্রশ্নের কোনই সদুত্তর দেননি চার শিক্ষক সীমা রানী, বিজয় কুমার, রেবেকা সুলতানা, মৌসুমী নিগার। নিয়োগ ব্যাপার কথা বলে সবাই অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি সাবেক প্রধান শিক্ষক শুধাংসু সরকার এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলী আকবরও নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। নিয়োগ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র বিদ্যালয়ে নেই বলেও জানান বর্তমান প্রধান শিক্ষক।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস জানান, আমি এইটুকু ভুল করবো না যে, আমাকে কেউ প্রশ্নের সম্মুক্ষিণ করতে পারে। নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা কোর্টে যেতে পারে। কোর্ট প্রমান করবে নিয়োগ সঠিক কিনা। এটাই হচ্ছে আমার উত্তর। আর কোন উত্তর নেই।

লিখিত অভিযোগ পাবার কথা স্বীকার করে জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ জানান, আহমেদপুর এম.এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে চার শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।