বৈঠকে মিয়ানমার, নাগরিকত্ব ছাড়া ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা

নাগরিকত্ব ছাড়া মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে আসা ১৯ সদস্যের শীর্ষ বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন উখিয়ার ক্যাম্পে অবস্থান করা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নেতারা।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে করণীয় নির্ধারণে শনিবার উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে এসেছেন মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। রোহিঙ্গারা কোন ভিত্তি ছাড়া মিয়ানমার ফিরতে রাজি না হওয়ায় শনিবারের দুই দফা বৈঠকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে যৌথ ডায়লগ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল ও রোহিঙ্গারা।

এ ডায়লগে মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। তবে কবে নাগাদ এ ডায়লগ অনুষ্ঠিত হবে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই হঠাৎ এটি সমাধান হবে এমন আশা করা দুরূহ। শনিবার বৈঠকে যৌথ ডায়ালগের কথা উঠে এসেছে। রবিবার বিষয়টি নিয়ে আবারো বৈঠক চলবে।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল শনিবার সকাল ১০টায় বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছান। প্রতিনিধি দলকে গ্রহণ করেন কক্সবাজার ত্রাণ প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দৌজা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম সরওয়ার কামালসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এরপর প্রতিনিধি দলটি বিমানবন্দর থেকে হোটেল রয়েল টিউলিপে যান। সেখান থেকে দুপুর দেড়টার দিকে যান উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে।

ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন তারা। সেখানে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা ছাড়াও রোহিঙ্গাদের ৩৫ জনের একটি প্রতিনিধিদল ছিল। এদের মাঝে ৭ নারী ও ২৮ জন পুরুষ রোহিঙ্গা ছিলেন।

বৈঠকে অংশ নেয়া রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ঘণ্টা তিনেকের বৈঠকটি দুই দফায় চলে। আলোচনায় মিয়ানমার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে আহ্বান জানান। ফিরে গেলে সেখানে কী রকম সুযোগ-সুবিধা পাবেন তার সম্পর্কে ধারণা দেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। এসময় রোহিঙ্গাদের পক্ষে নাগরিকত্বসহ নানা দাবি উত্তাপন করা হয়।

এদিকে বৈঠকের বাইরে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ক্যাম্পে বিক্ষোভ করেন রোহিঙ্গারা। তারা বলতে থাকেন, ‘আমরা বাঙালি নই, আমরা রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে আমাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আমরা ফিরে যাব না। আমাদের মা-বোনদের যে নির্যাতন করা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই। যারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তাদেরও বিচার করতে হবে।’

বিকাল ৫টার দিকে বৈঠক শেষ হলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কোন কথা বলেননি মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের কেউ।

বৈঠকে অংশ নেয়া কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম জানান, বৈঠকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে যৌথ ডায়লগে সম্মতি জানিয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধিদল রবিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরো প্রায় ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। এদিকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় তাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া চালানো হয়। কিন্তু দফায় দফায় চেষ্টা করেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। গত বছরের শেষ সময়ে ও চলতি বছরের শুরুতে প্রত্যাবাসন আরম্ভ হওয়ার কথা দিলেও কথা রাখেনি মিয়ানমার।

অপর একটি সূত্র মতে, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে আন্তর্জাতিক সমালোচনা প্রশমন করতে চায় মিয়ানমার। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রতিনিধি দল পাঠায় তারা। গত বছরও মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছিল। এরপরেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো গতি আসেনি। শনিবারে আসা দলটি ফিরে গেলে প্রত্যাবাসনে কী বার্তা আসে তা দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী।