ক্যান্সার এক দুরারোগ্য ব্যাধি। আপনার কাছের কারো ক্যান্সার হয়ে থাকলে তার অবস্থা দেখেছেন আপনি। প্রতিবছর বহু মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই রোগ এখন একটি গ্লোবাল সমস্যা। আপনারও এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমাদের দৈনন্দিন কাজের খারাপ প্রভাবের কারণেও কিন্তু দেহে জন্মায় ক্যান্সারের কোষ। আপনি হয়তো জানেনও না আপনার ছোট্ট কিছু সাবধানতা এবং সতর্কতা দেহে ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাঁধা প্রদানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রতিদিন তাই আপনাকে এমনকিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, যা কিনা আপনার দেহে ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক।
১. একটানা বসে থাকলে :
যারা একটানা অনেক্ষণ বসে থাকেন তাদের ক্যান্সারে আক্রান্তের সম্ভাবনা প্রতি ২ ঘণ্টায় প্রায় ১০% বেড়ে যায়। গবেষকদের মতে আধাঘণ্টা পরপরই উঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নেয়া ভালো। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই প্রতি ২ ঘণ্টায় একটু বড় ধরণের ব্রেক নেয়া জরুরি।
২. অ্যালকোহল ছেড়ে দিন :
মদ, বিয়ার ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দিন। এটি দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অ্যালকোহল পানের সঙ্গে অনেক ধরনের ক্যান্সার জড়িত। যেমন- স্তন ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, গলায় ক্যান্সার ইত্যাদি। অ্যালকোহল আমাদের ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৩. খাদ্য তালিকা বদলে ফেলুন :
খাদ্য তালিকা বদলে ফেলে আমরা অনেক সুস্থ জীবন কাটাতে পারি। সবজি, ফল এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের তালিকা তৈরি করুন। এগুলো বাওয়েল ক্যান্সারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবে। তা ছাড়া পুষ্টিকর খাবার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, সম্পৃক্ত ফ্যাট এবং লাল মাংসের কারণে ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি বাওয়েল ক্যান্সার হয়।
৪. পারিবারিক ইতিহাস জানুন :
বংশ বা পরিবারে ক্যান্সারঘটিত কোনো ইতিহাস রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করে জানার চেষ্টা করুন। যেমন- পরিবারের কারো স্তন ক্যান্সার থাকলে আপনারও এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. সূর্যের আলো থেকে নিরাপদ থাকুন :
সকালে সূর্য উঁকি দিলে কার না মন চায় সেই আলোতে বের হয়ে যেতে। এটা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে ম্যালিগনান্ট মেলানোমার মতো ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই উত্তপ্ত সময় সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন :
স্বাস্থ্যকর ওজন ভালো, তবে অতিরিক্ত ওজন মোটেও ভালো নয়। নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকার বড় একটি উপায়। এ ছাড়া ওজনের সঙ্গে দেহের নানা সমস্যাও জড়িত। দেখা গেছে, বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই) অনুযায়ী স্বাভাবিক ওজন অপেক্ষা ৩০ শতাংশ বেশি থাকলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।
৭. রাসায়নিক পদার্থ :
নানা ধরনের খাবার, দূষিত বায়ু এবং দূষিত পানি থেকে আমরা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণ করি। এসব পদার্থ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। যেমন- ভবন তৈরির সময় অ্যাসবেসটস নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তা ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময় সাবধানতা অবলম্বনের জন্য হাতে গ্লাভস, মুখে কাপড় পরে কাজ করা উচিত।
৮. ধূমপান ত্যাগ করুন :
প্রথমেই সিগারেট ত্যাগ করার কথা না বললেই নয়। এটি যে মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে তা বলার মতো না। দেহের যে কোষগুলোতে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে, ধূমপান সে কোষগুলোতে ক্যান্সার ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। আপনি যেই হোন না কেন, ধূমপান ত্যাগ না করলে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়।
৯.পরিমাণ মত লবণ :
প্রতিদিন আমাদের ৬ গ্রামের কম পরিমাণে লবণ অর্থাৎ ২.৪ গ্রাম সোডিয়াম খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এর চাইতে বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
১০.আগুনে পোড়ানো খাবার খেলে :
কয়লার আগুনে পোড়ানো, উচ্চতাপমাত্রায় তেলে ভাজা এবং রান্না করা মাংসে অনেক ধরণের কেমিক্যাল উৎপন্ন হয়। যা ক্যান্সারের কোষ গঠনে সহায়তা করে। মেরিনেট করার ফলে মাংসের উপরে যে লেয়ার তৈরি হয় তা সরাসরি আগুনের তাপে মাংস রান্না হতে বাঁধা দেয় এবং ক্ষতিকর কেমিক্যাল উৎপন্ন হতে পারে না। তাই রান্নার আগে অবশ্যই মাংস মেরিনেট করে নিন।
১১.ফলমূল ফ্রিজে রাখা থেকে বিরত :
ফলমূল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে তার পুষ্টিগুণ অটুট থাকে এবং ক্যান্সার কোষ গঠনে বাঁধা দানের ক্ষমতা সম্পন্ন নিউট্রিয়েন্টের পরিমাণ বেশি থাকে। যেমন টমেটো ও মরিচ যদি বাইরে রেখে দেন ফ্রিজে রাখার পরিবর্তে তাহলে এতে দ্বিগুণ পরিমাণে ব্যাক্টেকারোটেন এবং ২০ গুন বেশী পরিমাণে লাইকোপেন থাকে যা ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাঁধা দানে বিশেষ কার্যকর।
১২.ওভেনে বেক করে সবজি খেলে :
যদি আপনি স্বাস্থ্যকর খাবারের আশায় তেলে না ভেজে ওভেনে বেক করে সবজি খেতে চান তাহলে তা একেবারেই ভুলে যান। কারণ ওভেনে দেয়ার ফলে ব্রকলির ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় ৯৭% কমে যায়। একই বিষয় প্রযোজ্য অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও। যদি স্বাস্থ্যকর খেতে চান তাহলে ওভেনে না দিয়ে সেদ্ধ করে খান।।
১৩.সুগন্ধি কেমিক্যালযুক্ত মোমবাতি : সুগন্ধি কেমিক্যালযুক্ত মোমবাতির কারসিনোজেনিক প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে বদ্ধ ঘরে এই ধরণের কেমিক্যাল সমৃদ্ধ মোম পোড়ানোর ধোঁয়া এবং গন্ধ খুবই ক্ষতিকর। ঘরে আলো বাতাস চলাচল হতে দিন এবং সুগন্ধি মোম কেনা বন্ধ করুন।