চট্টগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এডিপিও তাপস পাল প্রশাসনিক কাজে স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহের শিকার হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সহযোগিতায় রক্ষা পেয়েছেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
সোমবার (২৩ জুলাই) দুপুরে নগরীর উত্তর কাট্টলী মুন্সি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে অভিভাবকদের সন্দেহের কবলে পড়েন তাপস পাল।
স্থানীয়রা জানান, গত রোববার উত্তর কাট্টলী মুন্সি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪ জন শিক্ষার্থীর মাথা সংগ্রহ করা হবে বলে এলাকায় একটি গুজব রটে।
প্রশাসনিক কাজে সোমবার সকালে এই স্কুলে আসেন শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস পাল। অচেনা মানুষকে স্কুলে প্রবেশ করতে দেখে একের পর এক অভিভাবকরা এসে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা স্কুল কার্যালয়ের সামনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। ঘটনার কথা জানতে পেরে অন্যান্য অভিভাবকরাও স্কুল কর্তৃপক্ষকে ফোন করতে শুরু করে।
এ সময় ওই শিক্ষা কর্মকর্তা ছেলের মাথা নেওয়ার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করছে বলেও গুজব রটিয়ে দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে এ ঘটনার কথা জানায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিভাবক আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান জানান, স্কুলে শিশুর মাথা নিতে লোকজন আসবে বলে গুজব রটে। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলে ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেখে অভিভাবকরা গুজবের ঘটনাকে সত্য মনে করে সন্দেহ করতে থাকে। ঘটনার কথা শুনে আমি স্কুলশিক্ষককে ফোন করি।
তিনি বলেন, স্কুলশিক্ষক আমাকে পুরো ঘটনা জানান এবং তাড়াতাড়ি স্কুলে আসতে বলেন। আমি যখন স্কুলে আসি তখন দেখি করিডরে থেকে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা অভিভাবকদের শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে পাহাড়তলী থানার ওসিকে ফোন করলে তিনি একজন এসআই ও কয়েকজন ফোর্স পাঠান। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে অভিভাবকরা কিছুটা শান্ত হন। কিন্তু তাদের সন্দেহ কমে না। পুলিশের উপস্থিতিতে পরবর্তীতে স্কুল ছুটি হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এই ঘটনার ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটি গুজব রটিয়ে ঘটনা সৃষ্টি করার চেষ্টা হতে পারে। পরে থানার ওসি এসে ক্লাসে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েছেন। এবিষয়ে সমাবেশ করে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হবে।
এ ব্যাপারে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ড. নেছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু বলেন, স্কুলে প্রশাসনিক কাজে এসে শিক্ষা কর্মকর্তা ছেলেধরা সন্দেহের শিকার হন। অভিভাবকদের মনে ছেলেধরার আতঙ্ক থেকে এমন সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি জানান, এই ধরনের যে কোন সন্দেহজনিত ঘটনায় ঘাবড়ে না গিয়ে সরাসরি তাকে অবহিত করার ব্যাপারে এলাকাবাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদানের জন্য ইমাম পুরোহিতদের অনুরোধ করা হয়েছে।