পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ উঠেছে চাটমোহর থানার ওসি সেখ নাসীর উদ্দিনের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে তার অপসারণ চেয়ে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করে লাইব্রেরী কক্ষে সমবেত হলে সেখানে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে নানা রকম কথা বলেন ওসি। পরে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হলে এএসপি (চাটমোহর সার্কেল) সজীব শাহরীন কলেজে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
জানা গেছে, বেশ কিছুদিন যাবৎ চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদের এবং তার অপসারণ চেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করে লাইব্রেরী কক্ষে সমবেত হন। এরপর ক্লাস না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যায়। পরে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে চাটমোহর থানার ওসি সেখ নাসীর উদ্দিন গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এবং অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে কথা বলার কিছুক্ষণ পর ওসি লাইব্রেরী কক্ষে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বাদানুবাদ শুরু হয়। এতে করে কলেজ ক্যাম্পাসে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এএসপি (চাটমোহর সার্কেল) সজীব শাহরীন গিয়ে শিক্ষকদের কথা শোনেন এবং এরজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ সময় শিক্ষকরা এএসপি’কে অভিযোগ করে বলেন, ওসি বলেছেন, আপনারা ক্লাস বর্জন করার কে? আপনাদের শিক্ষক হওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই। আমি গালাগালির ট্রেনিং নিয়ে এসেছি। আমি এর আগেও আপনাদের হুশিয়ারি দিয়ে গেছি। আপনারা আমার কথা শুনছেন না। আমি লাস্ট ওয়ারনিং দিচ্ছি, আপনারা কথা না শুনলে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। শুধু তাই নয়, ওই কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল মোস্তফাকে ‘পালের গোদা’ বলে আখ্যায়িত করেন ওসি। এরপর শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করলে ওসি থানায় ফোন দিয়ে সকল অফিসারকে কলেজে আসতে বলেন।
সহকারী অধ্যাপক কামাল মোস্তফা ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আমি ২৭ বছর চাকরি জীবনে এমন কথা শুনিনি। সকল শিক্ষকদের সমন্ধেও তার (ওসি) মুখে এতো নি¤œমানের মন্তব্য শুনে আমরা মর্মাহত। শিক্ষক শ্রেণীকে নিয়ে তার এমন মন্তব্য অত্যন্ত অশোভনীয়। এটা আামদের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।’
অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি সেখ নাসীর উদ্দিন বলেন, ‘প্রিন্সিপাল অভিযোগ করেছিল বহিরাগত লোকজন নিয়ে শিক্ষকরা ছাত্রদের ক্লাস থেকে বের করে দিচ্ছে এ কথা শুনে কলেজে গিয়েছিলাম। পরে শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তারা প্রিন্সিপালের বহিস্কারাদেশের কথা বললে আমি তাদের যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছি। কারণ কোন জায়গায় কি চাইতে হয় তারা সেগুলো জানে না। তিনি আরও বলেন, আমি ওই শিক্ষককে পালের গোদা বলিনি। আমি তাদের লিডারকে কথা বলতে বলেছি।’
এ ব্যাপারে এএসপি (চাটমোহর সার্কেল) সজীব শাহরীন বলেন, ‘ওসি এবং শিক্ষকদের মধ্যে কি কথা হয়েছে এটা আমার জানা নেই। পরে আমি কলেজে গিয়ে শিক্ষকদের সাথে কথা বলে যেটুকু জেনেছি তাতে মনে হয়েছে শিক্ষকরা ওসি’র আচরণে চরম ক্ষুব্ধ। তবে ওসি যদি এসব কথা বলে থাকে এটা তার ঠিক হয়নি। তার এসব কথা বলার এখতিয়ার নাই। তবে এরজন্য সে (ওসি) একবার দুঃখিত বলেছে। ভবিষ্যতে ওসি এরকম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’