সনাতনীদের স্লোগানে উত্তাল বগুড়ার সাতমাথা ‘কথায় কথায় ভারত যা, এই  দেশ কি তাদের বাপ দাদার’

// সঞ্জু রায়, বগুড়া:

সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং ভীতিসঞ্চারের দ্রুত বিচার, ক্ষতিপূরণ ও নৈরাজ্যের অবসান চেয়ে বগুড়ায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সনাতনীরা। 

রবিবার দুপুর ১২টা থেকে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সনাতনী জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে হাজার হাজার সনাতনীদের অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ জয় শ্রীরাম শ্লোগানের পাশাপাশি ‘তুমি কে তুমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘আমার দেশ সবার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়ব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘সনাতনীর ওপর আক্রমণ, মানি না মানব না’, ‘আমার ঘরে হামলা কেন, জবাব চাই, জবাব দাও’ ইত্যাদি নানা স্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো শহর। যেখানে নারীদেরও ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

বিক্ষোভ সমাবেশে সনাতনীরা বলেন, ‘আজ আমরা কয়েক দিন ধরে দিন-রাত পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। নিজেদের জানমাল আর সম্ভ্রম রক্ষায় আমরা কাজ করছি। কিন্তু এখন শুধু আত্মরক্ষা করলেই হবে না, সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ চলবে। আমরা আর পালিয়ে থাকতে চাই না। এই মাটি আমাদেরও। এটা আমাদের পিতৃপুরুষের সম্পত্তি। আমরা আর নিজ গৃহে পরবাসী থাকতে চাই না। আমরা কোথাও যেতে চাই না।’ তিনি বলেন, শুধু হাতে লাঠি নিয়ে যদি এ দেশের ছাত্রসমাজ একটা পরিবর্তন আনতে পারে, তাহলে তাঁরা কেন পারবেন না। তাঁরা কোথাও পালাবেন না। সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, যেভাবে হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে, মন্দির ভাঙচুর করা হচ্ছে, তা দেখে তাঁরা স্তম্ভিত। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তাঁরা এ দেশের নাগরিক। তাঁদেরও নিরাপদে বাঁচার অধিকার আছে। তাঁরা অনেক পালিয়েছেন, ১৯৭১-এ পালিয়েছেন, বিভিন্ন সময় সরকারের ক্ষমতা পরিবর্তনে পালিয়েছেন, অস্থিতিশীল যেকোনো পরিস্থিতিতে তাঁরা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এবার তাঁরা দুষ্কৃতকারীদের প্রতিরোধ করবেন। এই বাংলাদেশ তাদেরও মাতৃভূমি অথচ বারংবার একটি মহল সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষদের ভারতে যেতে বলেন। কিন্তু কেন? বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সনাতন সম্প্রদায়ের সকলে সারাদেশে যে হামলাগুলো হয়েছে তার সুস্থ বিচারসহ ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি এই বাংলাদেশে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে সনাতন সম্প্রদায়ের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকারের দায়িত্বশীলদের প্রতি আহবান জানান।

রবিবারের এই কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা ডা: এন.সি বাড়ই, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য দিলীপ কুমার দেব, সংগঠনের বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্মল রায়, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ, জাতীয় ক্রীড়াবিদ গোপাল তেওয়ারিসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও বগুড়ার ১২টি উপজেলার হাজার হাজার সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।