সোনালী আঁশের সুদিনভালো দাম পাওয়ার অপেক্ষায় বেড়ার পাট চাষী

// ওসমান গনি,বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি ঃ পাবনার বেড়ায় পাট চাষীরা পাট চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। অধিক উৎপাদন ও ভাল দাম পাওয়ার আশায় বেড়া উপজেলায় কৃষকরা এবার ৩ হাজার ১শ’৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছে। এবার গত মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে পাট চাষ করা হয়েছে ৬০ হেক্টরেও বেশী জমিতে। যমুনা পদ্মা পরিবেষ্টিত দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে উন্নত মানের পাটের চাষ হয়ে থাকে। তন্মধ্যে বৃহত্তর পাবনার বেড়ার পাটের গুনগত মান ভাল থাকায় পাট রপ্তানী কারকদের কাছে এ পাটের চাহিদা রয়েছে সব সময়।
বাংলদেশের উর্বর মাটিতে পাট চাষের ইতিহাস অনেক পুরোন। ব্রিটিশ স¤্রাজ্রের বাংলা দেশের কৃষকের জমিতে পাট চাষ করতে হলে ব্রিটিশ সরকারের নির্ধারিত অফিস থেকে অনুমতি নিতে হতো। তৎকালীন সময়ে পাট চাষ ইংরেজ সরকার মনিটরিং করতো এবং বাংলা দেশে উৎপাদিত পাটের কাঁচা মাল প্রক্রিয়াজাত করে তারা তাদের ব্যবহার্য পণ্য তৈরী করতো। তখন থেকেই বাংলার পাটের সুনাম ছিল। পাটের তৈরী বিভিন্ন পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। বর্হিবিশ্বের বাজারে রয়েছে বাংলাদেশের উৎপাদিত পাটের চাহিদা । মানের দিক দিয়ে প্রথম সারিতে এবং বিশ্বজোড়া রয়েছে এর খ্যাতি। স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের একমাত্র কৃষিপণ্য ছিল পাট। এজন্যই পাটকে বলা হতো বাংলাদেশের ’সোনা’,পাট তন্তুকে বলা হতো ”সোনালী আঁশ”। বিজ্ঞানের জয় যাত্রায় পৃথিবীতে বিকল্প বস্তুর উদ্ভব ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকায় পাট জাত দ্রব্যের ব্যবহারের জায়গা গুলো কৃত্তিম তন্তু দখল করে নেয়। বিশ্বময় পাট তন্তুর উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার ও চাহিদা একদিকে যেমন কমতে থাকে তেমনি অপর দিকে চাহিদা ও ব্যবহার হু হু করে বাড়তে থাকে কৃত্তিম তন্তুজাত দ্রব্যের। স্থানীয় ও বিশ্ব বাজারে পাট এবং পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা না থাকায় দেশের কৃষি খাতে থেকে বৈদেশিক আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়,দেশের কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, দেশে পাট চাষের পারদের মাত্রা দ্রুত শুন্যের কোঠায় নেমে আসতে থাকে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্ব পরিবেশের উপর কৃত্রিম বস্তু ও তন্তুর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করে। পরিবেশের উপর কৃত্তিম তন্তুর বিরুপ প্রভাবের কারণে সারা বিশ্ব এখন প্রকৃতির পাট জাতদ্রব্য ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ সহ কৃত্রিম তন্তুজাত দ্রব্য পরিহারে সজাগ হয়ে উঠেছে। পাটের সুদিনকে ধ্বংস করে দেওয়া এই কৃত্রিম তন্তু আজ বিশ্ব পরিবেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই সারা বিশ্ব এখন পরিবেশ বান্ধব পাট জাত দ্রব্য ব্যবহারের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার পাট চাষীরা এ বছরে প্রায় ৩ হাজার ১শ”৬০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করছে, যা গত মৌসুমের পাট চাষের তুলনায় প্রায় ৬০ হেক্টর বেশী জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। দেশীয় বাজারে বেড়ায় উৎপাদিত পাটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশীয় বাজার সহ বৈদেশিক বাজারেও রয়েছে বেড়ার পাটের চাহিদা । বাংলাদেশে পাটের জিনগত বিশ্লেষন, রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা ও উন্নত মানের তন্তু পাওয়ার জাত উদ্বভাবনে পাট গবেষনায় নিয়োজিত বাংলাদেশী বৈজ্ঞানিকদের সাফল্যে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশী পাটের বিজয় নিশান উড়তে শুরু করেছে।
ছোট নদী,বিল,জলাশয় ও ডোবায় মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি থাকায় পাট পচানোতে কোন অসুবিধা না হওয়ায় পাট গাছ থেকে উন্নত মানের তন্তু বা আঁশ চাষীরা সংগ্রহ করতে পারে। পর্যাপ্ত পানিতে পাট গাছ পচালে ভাল মানের আঁশ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। উন্নত জাত ও ভাল মানের পাটের আঁশ পাওয়ার কারনে বেড়া উপজেলার বেড়া সদর, নাকালিয়া, কাশীনাথপুর, নগরবাড়ী , বাঁধের হাট কাজীর হাট সহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে দেশীয় এবং রপ্তানী কারকদের পাটের বৃহৎ আড়ৎ ও গুদাম।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত কবীর জানান, পাট মৌসুমে অন্যান্য ফসল চাষের চেয়ে পাট চাষের খরচ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন অনেক কম হয়ে থাকে। বেড়ার পাট চাষীরা এবার উন্নত মানের বেশী ফলনশীল জে,আর,ও ৫২৪ জাতের পাট বেশী চাষ করেছে। এ জাতের পাটে হেক্টর প্রতি প্রায় ১২ বেল্ বা প্রায় ৬০ মন বা ২হাজার ৪শ’ কিলোগ্রাম আঁশ উৎপাদন হয়ে থাকে।
বেড়া উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক এ মৌসুমে চরের জমিতে পাট চাষ করছে। পাট চাষে খরচ কম, পাট কাঁটা ও আঁশ ছাড়ানোর সময় শ্রমিকের মজুরী কম থাকে। বড়শিলা গ্রামের পাট চাষী আব্দুর রাজ্জাক,চাকলার আমিনুল,যমুনার চরের চরনাকালিয়া গ্রামের কাদের শেখ,চরের খড়বাগানের বাবলু মাঝি ও ঢালার চরের রোস্তম এ বছরে পাটের চাহিদা ও ভাল দাম পাওয়ার আশা নিয়ে নিজেদের জমিতে পাটের চাষ করছে।#