সুন্দরগঞ্জে আবারও মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজে বাঁধা

// হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ

মডেল মসজিদের নামে অধিগ্রহনকৃত এবং নামজারি করা জমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে ফের বাঁধার মুখে উপজেলা প্রশাসন। একাধিকবার বাঁধা দেওয়ার কারণে দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ। বুধবার উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম এবং সহকারি কমিশনার ভুমি মো. মাসুদুর রহমান পুলিশ বাহিনীর সহায়তা নিয়ে মসজিদের অধিগ্রহনকৃত জমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে জমির মালিকগণ বাঁধা প্রদান করেন। এনিয়ে  থানায় অভিযোগ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।  

২০২০ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বাইপাস মোড়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উত্তরা ঢাকার মুক্তা কনস্ট্রাকশন এন্ড কনভয় সার্ভিস লিমিটেড। এরপর জানতে পারেন মসজিদের নামে অধিগ্রহনকৃত জমির কাগজপত্র এবং টাকা লেনদেন নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সে কারণে দীর্ঘ চার বছর ধরে ঝুলে রয়েছে মসজিদের নির্মাণ কাজ জানালেন, ঠিকাদার মাহমুদুন নবী মুরাদ। সেই থেকে পড়ে রয়েছে বালুু, পাথর ও রড়। 

পৌরসভার পূর্ব বাইপাস মোড়ে স্থানীয়দের অর্থায়নে নির্মিত বাইপাস মোড় জামে মসজিদটি ভেঙে সেই স্থানে উপজেলা মড়েল মসজিদ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করেন কর্তৃপক্ষ জানান, স্থানীয় মো. হাফিজার রহমান। তিনি বলেন, স্থানীয় মসজিদের সাড়ে পাঁচ শতক জমি মডেল মসজিদের নামে দান করে দেয়া হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ আরও সাড়ে ৪৮ শতক জমি অধিগ্রহন করেন। অধিগ্রহনকৃত জমির মালিকগণ টাকা না পাওয়ায় জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেন। এরপর ঝুলে যায় মসজিদ নির্মাণ কাজ। যার কারণে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ওই স্থানের পাশে টিনের চালা তুলে দীর্ঘদিন হতে কষ্ট করে নামাজ আদায় করে আসছেন।

অধিগ্রহনকৃত জমির মালিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. চাঁন মিয়া, মো. লাল মিয়া জানান, তারা এখনও জমি অধিগ্রহনের টাকা গ্রহন করেনি। তাদের দাবি বিধি বহিভূত অধিগ্রহকৃত জমির বসতবাড়ি ও দোকান ঘর উচ্ছেদ করে যদি সরকার মসজিদ নির্মাণ করে তাহলে তো করার কিছু নাই। জমির জটিলতা নিরসন না করে মডেল মসজিদের নামে নামজারি করা বেআইনি। 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি মো. মাসুদুর রহমান জানান, উপজেলা মডেল মসজিদের নামে সাড়ে ৪৮ শতক জমি নামজারি হয়েছে।  অধিগ্রহনের টাকা না পাওয়ার বিষয়টি তার জানা নাই।

গাইবান্ধা জেলার ভুমি অধিগ্রহন শাখার সিনিয়র সহকারি কমিশনার মো. জাহিদ বিন কাশেম জানান, তাদের নামের জমির মালিকানার কাগজপত্র সঠিক আছে কিনা তা না জেনে কিছু বলা যাবে না। তারা কাগজপত্র নিয়ে এলে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মুক্তা কনস্ট্রাকশন এন্ড কনভয় সার্ভিস লিমিটেড মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করেন ২০২০ সালে জানান গাইবান্ধা ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপরিচালক মো. মিরাজুল ইসলাম। তার ভাষ্য মোট ৫৪ শতক জমির মধ্যে তিনতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণ হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায়  ১৩ কোটি টাকা। কিন্তু জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারনে দীর্ঘদিন হতে কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় পূর্বের বরাদ্দের মাধ্যমে বর্তমানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারনে পুনরায় টেন্ডার হয়েছে। 

গাইবান্ধা জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তরের নিবার্হী প্রকৌশলী এস এম রফিকুল ইসলাম জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য পুনরায় টেন্ডার হয়েছে। এতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। গত ২২/০৪/২০২৪ তারিখে ঘঙঅ (কার্যাদেশ) প্রদান করা হয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। সে মোতাবেক কাজ করতে গেলে বাঁধা প্রদান করেন জমি মালিকগণ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি অধিগ্রহন করা হয়েছে। অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলও শাখা থেকে প্রদান করা হয়। সরকারি গেটেজ অনুযায়ী জমি মালিক ইসলামি ফাউন্ডেশন। তাই মসজিদ নির্মানে কোন বাধা নেই। অল্প সময়ের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ সমাধান করা হবে।