// নাটোর প্রতিনিধি
ব্যাটারিচালিত বউ রিকশার উপার্জনে সংসার চলে নাটোরের শারিরিক প্রতিবন্ধী মুন্না হোসেন (১৮)। তার সেই ভ্যানটি মারপিট করে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা । উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রতিবন্ধী মুন্না। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে সদর উপজেলার আখেরের মোড়ের কাছে যাত্রীবেশি তিন ছিনতাইকারীরা তাকে মারপিট করে বউ রিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায় । একপর্যায়ে কেঁদে কেঁদে আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাই যাওয়া বউ রিকশার খোঁজ করতে দেখা যায় তাকে। মুন্নার এমন অসহায়ত্ব দেখে ভারক্রান্ত হয়ে ওঠে আশপাশের মানুষের মনও।তারপর থেকে প্রতিবন্ধী মুন্নার কান্না থামছে না । সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলার পাশাপাশি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবার চিকিৎসার খরচ যোগাতে মুন্না । মুন্না নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের আমহাটি ফকিরপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে ।
মুন্না হোসেন জানান, ওইদিন সকাল ১১ টায় নাটোর ষ্টেশন বাজারের যাত্রী তোলার জন্য বসে ছিল মুন্না । এ সময় তিন তরুন শহরের তেবাড়িয়া হাটে যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠে । তেবাড়িয়া হাটে যাওয়ার পর তাকে আখেরের মোড়ে যাওয়ার জন্য বলে । আখেরের মোড় পাওয়ার আগেই যাত্রীবেশি ছিতাইকারীরা তাকে মারপিট করে নির্জন স্থানে বেঁধে রেখে বউ রিকশাটি নিয়ে চলে যায় । এ সময় মুন্নার পকেটে থাকা একটি মুঠোফোন ও ২৫০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা । পরে স্থানীয় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে । বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও আর সন্ধান মেলেনি বউ রিকশাটির । ঘটনার দিনই শারিরিক প্রতিবন্ধী নাটোর সদও থানায় একটি জিডি করেন ।
মুন্না জানান, জন্মগতভাবেই শারিরিক প্রতিবন্ধী তিনি । একটি হাত ও একটি পা বাঁকা । ঠিকভাবে কাজও করেনা । কথা বলতেই সমস্যা হয় । ভারি কোনো কাজ করতে না পারায় পাঁচ মাস আগে সমিতি থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এই ব্যাটারিচালিত বউ রিকশাটি কিনেছেন। এই রিকশা চালিয়ে ঋণের কিস্তি শোধ করে সংসার ও অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ যোগাতেন। কিন্তু তার সেই উপার্জনের পথটিও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কিভাবে সংসার খরচ, বাবার চিকিৎসা এবং কিস্তিদিবেন সেই চিন্তায় প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি রিকশাটি উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মুন্নার প্রতিবেশী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর মান্নান বলেন, মুন্না অনেক ভালো ছেলে । তার যে শারিরিক অবস্থা তাতে কোন কর্ম করাই সম্ভব না । তারপরও ছেলেটা অনেক কষ্টে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো । এমন একটা ছেলেকে মারপিট করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাএটা মানা খুব কষ্টকর। বিত্তবানদের উচিত প্রতিবন্ধী মুন্নার পাশে দাঁড়ানো। কারণ রিকশা না থাকায় মুন্নার যেমন আয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তেমনি তার ওপর কিস্তির ভারও এসে পড়বে।
নাটোর সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, শহরের ষ্টেশন বাজার এবং আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোর সনাক্ত করা যায়নি। তারপরও আমরা প্রতিবন্দী মুন্নার বউ রিকশাটি উদ্ধার এবং জড়িতদেও খুজে বের করতে আমরা কাজ করছি ।