// নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় (ভোকেশনাল শাখা থেকে) একসাথে পাস করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য দুই’বোন ও তাদের এক সন্তাান। তারা আলোচিত একই পরিবারের তিন বোনই ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য।
এদের মধ্যে বড় বোন হালিমা বেগম (৪৮) ও মেঝো বোন মোছাঃ নাছিমা বেগম (৪০) স্থানীয় বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সদস্য। তারা দুজনই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ওমর গাড়ি ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী ছিলেন। আর ইউপি সদস্য নাছিমার ছেলে মোঃ সোহানুর রহমান সোহান (১৬) নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এসএসসি ভোকেশনাল শাখা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ সোহান তার মা ও খালার সাথে এসএসসি পাস করলো।
রোববার (১২ মে) ফল প্রকাশের পর দু-বোন ও তাদের সন্তানের সাফল্যের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এতে উচ্ছ্বসিত হয়ে তারা এলাকায় মিষ্টি বিতরন করেছেন । তারা জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার কৃষ্ণপুর দিঘা ও মির্জাপুর দিঘা গ্রামের বাসিন্দা। বড় বোন হালিমা বেগম নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও মেঝবোন নাছিমা বেগম একই ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য।
নাছিমা বেগম জানান, ফলাফলে বড় বোন হালিমা বেগম জিপিএ-৩ দশমিক ৮৯ এবং নাছিমা বেগম জিপিএ- ৩ দশমিক ৬৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাধ্যমিক পাস করা নাছিমা বেগম উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানান, লেখাপড়া করার ইচ্ছে ছিল প্রবল। অর্থাভাবে বাবার বাড়িতে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তাদের দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় বোন হালিমা বেগম এবং নাছিমা বেগম সেসময় মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন।
নাছিমা বলেন, সংসারে তার দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সন্তানের অনুপ্রেরণায় দুই বোন একই সাথে ওমর গাড়ি ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন। অনেকে অনেক কথা বলেছে তবুও হাল ছাড়েননি। সন্তানের সাথে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। আজ দুই বোন ও ছেলের সাথে মাধ্যমিক পাশ করায় খুব খুশি। ফলাফল জানার পর আশপাশের মানুষ তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
নাছিমা আরো বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লেখাপাড়া জানাটা খুব প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদে সদস্য হওয়ার পর আরো বেশি লেখাপড়ার বিষয়টি উপলব্দি করতে পেরেছি।
বড় বোন হালিমা বেগম জানান, এই বয়সে এসে লেখাপড়া করার কথা শুনে অনেকে হাসাহাসি করেছে, ঠাট্রা-বিদ্রুপ করেছেন। এতে তারা পিছপা হননি। বরং তারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখাপাড়া চালিয়ে গেছেন। আজ পরীক্ষায় পাস করার পর তাদের খুব ভাল লাগছে।
নাছিমা বেগমের ছোট ছেলে সোহানুর রহমান সোহান জানায়, নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাসুদেবপুর থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নেয়। ফলাফলে জিপিএ-৩ দশমিক ৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে মায়ের চেয়ে তার রেজাল্ট এগিয়ে রয়েছে। একসাথে লেখাপড়া করতে গিয়ে মাকে তার বন্ধুর মতোই মনে হয়েছে। সুখ-দুঃখ একসাথে ভাগ করে নিয়েই লেখাপড়া করেছেন তারা। সাফল্যও এসেছে একসাথেই। মা-ছেলে এক সঙ্গে পাস করায় খুব ভাল লাগছে। ভবিষ্যতে মাকে সঙ্গে নিয়ে লেখা পড়া করতে চান সোহান।
বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান আলী জানান, আমার গর্ব হচ্ছে এই ভেবে যে, ৪০ বছর বয়সের বেশি সময়ে দুইজন ইউপি সদস্য নিজেদের শিক্ষিত হিসাবে গড়ে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। আগামিতে তারা এই ধারা অব্যাহত রাখুক প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি তাদের পড়ালেখা চালাতে কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তিনি তা করবেন।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ওমর গাড়ি ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আজিজ উল আলম বলেন, লেখাপড়া করতে বয়স লাগে না, নাছিমা ও হালিমা তা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের মত দেশের সকলে এগিয়ে আসলে খুব সহজে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেয়া সম্ভব হবে। মা-ছেলে ও দুই বোনের এই সাফল্য সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা।
উল্লেখ যে, গত ২০২২ সালে ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একই পরিবার থেকে ৩ বোন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে বড় বোন হালিমা বেগম নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও মেঝবোন নাছিমা বেগম একই ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য। ছোট বোন শাহনাজ পারভিন সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য। এছাড়াও নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে তাদের মাও দুইবার সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ছিলেন।