// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ
ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার ও গ্রুপিং এর রাজনীতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস। বুধবার রাতে পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর মাঝে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব রুপ নেয় তুমুল সংঘর্ষে। রাত ৯ টা থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার তান্ডবে ভাংচুর করা হয় শজিমেক ছাত্রাবাসের ৬ থেকে ৭ টি কক্ষ আর পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত হন প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে নেয়া হবে যথাযথ ব্যবস্থা বলছেন শজিমেক কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ঘড়ির কাটায় তখন রাত প্রায় ৯টা। শিক্ষার্থীদের অনেকে যখন ৫ম বর্ষের চূড়ান্ত প্রফেশনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত তখন হঠাৎ ছাত্রলীগের দুই কর্মী ফুয়াদ ও আলী হাসানের মাঝে পড়ার টেবিল দখল নিয়ে শুরু হওয়া দ্বন্দ্বের জেরে ছাত্রাবাসসহ পুরো ক্যাম্পাস রুপ নেয় রণক্ষেত্রে। মূহুর্তের মধ্যে ভাংচুর চালানো হয় ছাত্রাবাসের ৬ থেকে ৭টি কক্ষে। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের মূল্যবান জিনিসপত্র। ছাত্রলীগের যে তান্ডব চলে প্রায় ৩ ঘন্টা রাত ১২টা পর্যন্ত। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও সংঘর্ষে আহত হন প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী যাদের মাঝে এখনো শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ জন ।
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বৃহস্পতিবার দুপুরে শজিমেক ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে ছাত্রলীগ কর্মীদের একাংশ। অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতারা তাদেরকে আনুগত করতেই এই হামলা চালিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে শজিমেক কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি শৈশব রায়ের নির্দেশে তার অনুসারীরা ছাত্রলীগের একাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় তারা কলেজের ছাত্রাবাসের পাঁচটি কক্ষে হামলা চালিয়ে তান্ডব চালান। এ সময় শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিল, কংকাল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ ছাড়াও ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়।
এছাড়াও ছাত্রলীগের আরেক নেতা আরিফ বলেন, তারা সুস্থ রাজনীতি চান কিন্তু বর্তমান কমিটি নানা অসঙ্গতিসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নানা অন্যায় দাবি বাস্তবায়নে জুলুম করছেন। সর্বশেষ বুধবার রাতের ঘটনায় তারা মর্মাহত, ন্যায় বিচারের দাবি তাদের।
তবে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি অর্ঘ্য রায় পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ক্যাম্পাসের তাদের সভাপতি শৈশব রায় ছিলোই না সে পারিবারিক প্রয়োজনে সিলেটে আছেন। কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে আগের মতো সংঘাত সৃষ্টি করারপাঁয়তারা করছে। এ হামলার সঙ্গে তাদের কেউ জড়িত নয়। কলেজ প্রশাসনের তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে। তিনি আরো বলেন, পদবঞ্চিত ও আগের কমিটির অনুসারীরা বর্তমান কমিটির কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন। ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করতে তৃতীয় পক্ষ গ্রুপিং সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ তাদের।
এদিকে শজিমেক ছাত্রাবাসের সহকারী হোস্টেল সুপার ও সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মিজানুর রহমান এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের এই সংঘর্ষের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে, মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৬ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪ জন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। বুধবার রাতে তারা শক্তহাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং তাৎক্ষণিক ৩ জনকে আটক করলেও পরে অধ্যক্ষের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ শৈশব রায়কে সভাপতি এবং মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্যের মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। ঘোষিত এই কমিটিতে কাঙ্খিত পদ না পাওয়ায় এবং ক্যাম্পাসে আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে তখন থেকেই সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দদের।
বিভিন্ন সময় ঝামেলা বাঁধলেও সর্বশেষ বুধবার রাতে ছাত্রলীগের এমন তান্ডবে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে। দ্রুততম সময়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্যে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির দাবি সকলের।