// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ
বগুড়ায় নদীভাঙ্গনের কবলে সব হারানো ২০টি পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২শতক জমিসহ ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরুপ এই ঘর যেন প্রত্যেকটি পরিবারের কাছে আবারো সুখের নীড় হয়ে ধরা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের মাঝে এসব ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেক পরিবারকে প্রদান করা হয়েছে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাছেদুউজ্জামান রাছেলের সার্বিক পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে এই ঘর হস্তান্তর করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, ভূমিহীন গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ২০টি পরিবার এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকাঘরে থাকবেন এর থেকে প্রশান্তির আর কি হতে পারে। এই উদ্যোগে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে সারাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের জমি ও ঘর নাই, তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দিয়েছেন। তিনি ঘোষনা দিয়েছেন দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে তারাও আন্তরিকতার স্বার্থে কাজ করার প্রয়াস করে যাচ্ছেন।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সারিয়াকান্দি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ কুমার বসাক, বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট সাদমান আকিফ প্রমুখ।
কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাছেদুউজ্জামান রাছেল জানান, গত বছর আগষ্টের শেষে ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে দুই দফা ভাঙনে কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা গ্রামের প্রায় ২৩টি পরিবারের ঘর-বাড়ি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় যারা পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নিতে পারেননি। সেসময় থেকেই তারা প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতায় চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভাঙ্গনকবলিত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর, সেই ধারাবাহিকতায় আজ তারা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। এখন তাদের বিভিন্ন কর্মের ব্যবস্থা করে দেয়ারও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন মানবিক এই জনপ্রতিনিধি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর পাওয়াদের মাঝে একজন ৭০ বছরের বিধবা রুমিয়া বেওয়া জানান, গত বন্যায় তার বাড়ি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে শুধু এক কাপড়ে জীবন রক্ষার্থে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলো। থাকার কোন জায়গা ছিল না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারে পাকা ঘরে থাকতে পারবেন তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। তিনি বুকভরা দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রী ও তাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের জন্যে। রুমিয়ার মতো খুশি উপকারভোগী সকলেই।
এর আগে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদে সার্বজনীন পেনশন স্কিম এর বুথ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন গণ উন্নয়নমুখী কার্যক্রমের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এখন থেকে কোনো মানুষের মনে বৃদ্ধ বয়সে পেনশন না পাওয়ার আক্ষেপ থাকবে না। তিনি সকলকে এ কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করার জন্য অনুরোধ জানান। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ৪টি ক্যাটাগরিতে যে পেনশন স্কিম রয়েছে স্ব উদ্যোগে সকলকে রেজিস্ট্রেশন করার আহবান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ নাগরিকগণও ১০ বছর নিরবচ্ছিন্ন চাঁদা প্রদান করলে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন।