// চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহরের গুমানী নদীতে পলো বাওয়া বাউত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪ জানুয়ারী) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ ধরার এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গুমানী নদীর বওশা ঘাটের উজান ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় শত শত সৌখিন মাছ শিকারী মাঘের শীত উপেক্ষা করে মাছ শিকারের জন্য নদীতে নামেন। মঙ্গলবার উজান এলাকায় নদীর রাবার ড্যাম সক্রিয় করায় ভাটি এলাকার পানি কমে যায়। প্রতি বছর এমন সময় বাউতরা (যারা পলো দিয়ে মাছ শিকার করেন) মোবাইল ফোনে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে এ নদীতে পলো দিয়ে মাছ শিকারে আসেন এবং এমন উৎসবে মাতেন।
বুধবার সকাল থেকে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া, পাবনা সদর, বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন এলার মানুষ লসিমন করিমন ভ্যান রিকসা সাইকেল মোটরসাইকেল যোগে চলে আসেন বওশা ব্রীজে। দুই কিলোমিটার উজানে গিয়ে সেখান থেকে একযোগে মাছ শিকারে পানিতে নামেন। হাত পলো, পাও পলো, নেট পলো ছাড়াও খেওয়া জাল, ঠেলা জাল, কারেন্ট জাল, ডোরা জাল, হাত খড়াসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায় সৌখিন মাছ শিকারীদের। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় গুমানী নদী ও নদী পাড়। মাছ শিকারীরা জানান, মাছ পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয় এ উৎসবে অংশ গ্রহনেই আনন্দ।
আটঘরিয়া উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আলমগীর হোসেন দেশে এসেছেন। গুমানী নদীতে বাউত উৎসব অনুষ্ঠিত হবে শুনে পলো নিয়ে মাছ ধরতে এসেছেন তিনি। চাটমোহরের পাচুরিয়া গ্রামের ভুট্টো প্রাংসহ অন্যান্যরা জানান, প্রায় প্রতি বছর এসময় গুমানী নদীতে পলো দিয়ে মাছ শিকারে আসেন তারা। পলো দিয়ে মাছ শিকারের আনন্দ অনুভূতি অন্যরকম। তারা আরো বলেন, আমরা মাছ শিকারের আনন্দ উপভোগের জন্য এ সময় টার অপেক্ষায় থাকি। চায়নাসহ নিষিদ্ধ অন্যান্য জাল ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ায় মাছ কমে গেছে বলেও জানান তারা।
নদীর কোথাও গলা পানি, কোথায় হাটু পানি আবার কোথাও সাঁতার। মাছ শিকারের সময় অপেক্ষাকৃত ছোটরা নদীর পারে এবং বড়রা মাঝের দিকে থাকেন। কারো পলোর মধ্যে মাছ পরলে অন্যরা মাছটি ধরতে তাকে সহায়তা করেন। মাঝে মধ্যে “আল্লাহ আল্লাহ রাসুল বলো লা ইলাহা” এমন সমবেত কন্ঠস্বর যেন বাউত উৎসবে যোগ করে আনন্দে বাড়তি মাত্রা। আইড়, ষোল, বোয়াল, বড় পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পেতে দেখা যায় বাউতদের। কখনো সাড়ি বদ্ধ কখোনো বিশৃঙ্খল ভাবে মাছ শিকার করতে করতে সর্পিল গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হন তারা। বাউত দের সামনে-পেছনে অন্যান্য জাল দিয়ে মাছ ধরেন অনেকেই।