// নাজিম হাসান,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য রাহেনুল হক রায়হান। গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি এই দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে রাহেনুল হক রায়হান বলেন,ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আমি সন্তুষ্ট নয়,আমি মনে করি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী কালো টাকা ব্যবহার করেছেন। তিনি আরো বলেন,নির্বাচনের পরেও আমাদের কর্মীদের একেরপর এক মারধরসহ বাড়িঘর পুড়ানো হচ্ছে, আমার কর্মীরা অনেকে এখন মেডিকেলে ভর্তি আছেন। প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রায়হান বলেন, যারা ভোটের কাজে নিয়োজিত ছিলেন পোলিং অফিসার থেকে শুরু করে প্রিজাইডিং অফিসার সবার আচরণ পক্ষপাতিত্ব মূলক ছিলো। আমি যখন বিভিন্ন কেন্দ্রে যায় তখন দেখেছি কক্ষ বন্ধ রেখে তারা কাজ করছিলো। আমি তাদের প্রশ্ন করলে তারা কোনো সদুত্তর উত্তর দিতে পারেননি। রাহেনুল হক রায়হান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তবে এখানে মনোনয়ন পান বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন রায়হান। বেসরকারি ফলাফলে ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৯ ভোটে জয়ী হয়েছেন বর্তমান সাংসদ শাহরিয়ার আলম আর কাঁচি প্রতীকের রায়হান পেয়েছেন ৭৪ হাজার ২৭৮ ভোট। অপরদিকে,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী -১ ( তানোর -গোদাগাড়ী ) আসনে ভোট কারচুপি , ফল বাতিল , পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী।
একই সাথে তার সমর্থকদের উপর নির্বাচনত্তোর হামলা মামলা চলছে বলেও দাবি করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করা হয়। লিখিত বক্তব্যে গোলাম রাব্বানী বলেন, গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি রাজশাহী-১ ( গোদাগাড়ী-তানোর ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করি । আমার মার্কা ছিল কাঁচি । নির্বাচনের শুরু থেকে আমার কর্মী সমর্থকগণ আমার পক্ষে নিরলসভাবে আমার প্রতীক কাঁচি মার্কার জন্য ভোট প্রার্থনা করে । গোদাগাড়ী-তানোরের অধিকাংশ শান্তিপ্রিয় ভোটার আমার পক্ষে অবস্থান নেয় । আমি নির্বাচনের অংশ হিসেবে গোদাগাড়ীতে একটি এবং তানোরে একটি বিশাল জনসভা করি । সেই জনসভায় হাজার হাজার জনগণ উপস্থিত হয় । আমি সহ আমার কর্মী-সমর্থনগণ এবং সাধারণ জনগণ সবাই মনে করেছিল যে আমি ভোটে ব্যাপক ভোটের ব্যাবধানে জয়যুক্ত হবো । প্রকৃতপক্ষেই আমি ভোটে জয়যুক্ত হয়েছি বলে মনে করি । কিন্তু ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে । যার যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত আমার নিকট আছে । ভোটের দিন বাহিরের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেও গোদাগাড়ী তানোরের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে অদৃশ্য শক্তির ইশারায় গোদাগাড়ী তানোরের উপজেলা চেয়ারম্যান,ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকজন চেয়ারম্য নের সহযোগিতায় ও প্রিজাইডিং অফিসারগণ ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করেছে । কৌশলে প্রিজাইডিং অফিসারগণ আমার এজেন্টদের নিকট থেকে ফলাফলের পূর্বেই ফলাফল শীটে স্বাক্ষর করে নিয়ে তাদেরকে ভোট গণনার সময় কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। কারচুপির মাধ্যমে প্রকাশিত ফলাফল স্থগিত করার জন্য আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর ভোটের দিনই একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি ।
ভোটের দিন নৌকা প্রতীকের সমর্থকগণ ম-ুমালা ভোটকেন্দ্রে পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করেছে। আমি এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং পুনঃনির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন,আপনারা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর কর্মী- মর্থকগণ আমার কর্মী -সমর্থকদের উপর নির্যাতন শুরু করেছে । তালন্দ ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব নাজিমুদ্দিন বাবুকে নৌকার সমর্থকগণ প্রকাশ্য দিবালোকে লাঞ্ছিত করেছে । এছাড়াও তানোরের দুলাল,কামারগাঁসহ গোদাগাড়ী তানোরের অধিকাংশ স্থানে তারা হামলা করছে । বরেন্দ্র গভির নলকুপের বিভিন্ন অপারেটরগণ যারা আমার পক্ষে ভোট করেছে তাদেরকে ভয় ভিতি প্রদাণ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন গভির নলকুপে জরপূর্বোক তালা মারছে । এতে করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে । ভোটের দিন মু-ুমালায় প্রশাসনের সাথে নৌকার সমর্থকদের পরিকল্পিত সংঘাতের ঘটনায় আমার কর্মী – সমর্থকদের উপর মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদেরকে আটক করেছে । আমি এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা কোনো সংঘাত চাই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি । কিন্তু বর্তমান নৌকার কর্মী – সমর্থকগণ আমার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা, মামলা শুরু করেছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্দেশনায় তার সমর্থকেরা হামলা মামলা করার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় ভার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকেই বহন করতে হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ভোটের দিন দেওপাড়া ইউনিয়নের রাজাবাড়ি মুক্তিযোদ্ধা অফিসে নৌকার সমর্থকগণ হামলা করে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ আমার বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আহত করে এবং ওই অফিসের চেয়ার , টেবিল পুড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, ভোটের দিন নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী যেসব কেন্দ্রে ভোট পরিদর্শনের জন্য যান সেখানে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন জনকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেন এবং ভোটের পর আমার কর্মী সমর্থকদের উপর অত্যাচার করবেন বলেন। বর্তমান এসব কর্মকা- তার ঐ বক্তব্যের বহিঃপ্রকাশ বলে আমি মনে করি । আমার জানামতে ভোটের দিন বেলা ৩ টার পূর্বেই অধিকাংশ ভোটার ভোট প্রদাণ করেছেন। ৩ টার পরে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তেমন ছিল না। তখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ২৮ % । কিন্তু বেলা ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে কিভাবে ৪৬ % ভোট কাস্ট হলো তা আমার নিকট বোধগম্য নয় । ভোটারের এরূপ রহস্যজনক উপস্থিতি প্রমাণ করে যে কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ভোটের ফলাফল নৌকা মার্কার পক্ষে নিয়ে যাবার জন্য পরিকল্পিতভাবে ভোটার উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বশেষ আমি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং গোদাগাড়ী – তানোরে পুনঃভোটের জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা-মামলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এসময় এই আসনের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তারুজ্জামানসহ গোলাম রাব্বানীর সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।#