ডাক্তারে প্রচেষ্টায় বদলে গেছে আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স, বেড়েছে সেবার মান

// আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

বদলে গেছে হাসপাতালের পরিবেশ। ভেতরে ঢুকতেই শত শত রোগীর দীর্ঘ লাইন। ঝকঝকে হয়ে উঠেছে হাসপাতালের ভেতর-বাহির। সবুজে ছেয়ে গেছে চারপাশ। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ভালো সেবা পাওয়ায় উপজেলার ছাড়াও আশপাশের চাটমোহর, পাবনা সদর এবং ঈশ্বরদী উপজেলা থেকে রোগী আসছে আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

স্বাভাবিক প্রসবেও সুনাম কুড়িয়েছে হাসপাতালটি। চিকিৎসক-নার্সরা এখন আর হাসপাতাল ছাড়তে চান না। তাদের থাকার জন্য আবাসিক ভবনগুলোও নতুনভাবে সাজানো হয়েছে।

আটঘরিয়া উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিভিন্ন অনিয়ম অবহেলার কারণে ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। সামান্য অসুস্থ হলেও রোগীদের পাবনা জেলা সদর হাসপাতাল যেতে হতো। আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ-আল-আজিজ যোগদানের পর দেড় বছরে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে দিয়েছেন তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বহির্বিভাগে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬শ’ ২৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে অন্তর্বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার ৩শ’ ৯১ জন এবং জরুরি বিভাগে ১৮ হাজার ১শ’ ৮ জন। ২০২২ সালে বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৩২ জন।

একই সময়ে অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৮৮ জন এবং জরুরি বিভাগে ১১ হাজার ৭৭২ জন। ৪৯ বছর পরে চালু হওয়া অপারেশন থিয়েটরে চলতি বছরে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৪০২ জন এবং সিজার হয়েছে ৭৯ জন প্রসূতির। যা আগের বছর সাধারণ মানুষের কাছে ছিল স্বপ্নের মতো।

সরেজমিনে আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৬ একর জমির ওপর স্থাপিত হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে ঝকঝকে পরিবেশ। হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে জরুরি বিভাগ। সুন্দর বিশ্রামাগার। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য তালিকা টানানো রয়েছে দেয়ালে এবং সীমানা প্রাচীরের ভেতরের চারপাশে রোপণ করা হয়েছে ফলদ-বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ।

হাসপাতাল চত্বর যেন একটা ছোটখাটো পার্ক। রয়েছে কয়েকশ ফুল ও ফলের গাছ। এ হাসপাতালে রয়েছে গাইনি কনসালট্যান্ট। স্বাভাবিক প্রসব বাড়াতে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে নিয়মিত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মাসে ৪০ থেকে ৫০টি স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে।

আটঘরিয়া উপজেলার হিদাসকোল থেকে হাসপাতালে মাকে ভর্তি করেছিলেন মোঃ মামুন হোসেন। তিনি বলেন, ৩ দিন আগে মাকে ভর্তি করেছিলাম। এখানকার চিকিৎসক ও নার্সরা অনেক আন্তরিক। হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেয়াসহ নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছে। হাসপাতালের পরিবেশটাও অনেক সুন্দর। পৌর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক তার বোনকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। তিনি জানান, আগে অনেক ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হতো। এখন প্রায় সব ধরনের ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে। স্বল্প খরচে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ-আল-আজিজ বলেন, হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে আলাদা করে পরিকল্পনা করে সেগুলো বাস্তবায়ন করেছি। এ কাজে সহকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ সবাই সহযোগিতা করেছেন। হাসপাতালটি ৪৯ বছর আগে স্থাপিত হলেও এখানে অপারেশন থিয়েটর ছিলনা আমি আসার পর তা বাস্তবায়ন করেছি। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টেলি-মেডিসিন সেবা, পরিচ্ছন্নতা, ডাক্তার-নার্সদের উপস্থিতি, পরিত্যাক্ত জায়গায় সবজি বাগান, ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপন, জলাশয়ে মাছ চাষসহ নানা কার্যক্রম এর বাস্তবায়ন এবং ৩১ শয্যা ভবন থেকে ৫০ ভবনে স্থানান্ত করা হয়েছে। এসকল কাজের স্বীকৃতি সরূপ অক্টোবর মাসে রাজশাহীবিভাগের শ্রেষ্ঠ ও সারা বাংলাদেশের মধ্যে ১১ তম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ডেন্টাল ইউনিট, স্বাভাবিক প্রসব, সিজার, অপারেশন, প্যাথলজি, ফার্মেসি, করোনা টেস্ট ও করোনার টিকা, ডেঙ্গু পরীক্ষা, গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য এএনসি কর্নার, ইপিআই বা টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে। নন কমিউনিকেবল ডিজিজের জন্য রয়েছে আলাদা এনসিডিসি কর্নার। রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এনসি কর্নার ও পিএনসি কর্নার। শিশুদের জন্য রয়েছে আইএমসিআই কর্নার। যেখানে মা ও শিশুদের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন করা হয়।

পাবনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোঃ শহিদুল্লাহ দেওয়ান জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর তুলনায় অনেক ভারো সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই হাসপাতালে ডা. আব্দুল্লাহ-আল-আজিজ আসার পরে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সেবার পরিধি বেড়েছে।