// লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি ঃ
নাটোরের লালপুরে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির আশায় আমবস্যা রাতে ও দিনে কলা খাচ্ছেন হাঁপানি ও অন্য রূগীরা। প্রতিটি কলা চার টুকরা করে প্রতিজনকে এক টুকরা করে খাওয়াচ্ছেন কথিত ওই কবিরাজগণ। আর প্রতি টুকরার দাম রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা। অর্থাৎ এ বছর প্রতিটি কলার দাম ধার্য হয়েছে ২০০ টাকা।
নাটোরের লালপুরে দীর্ঘ দিন ধরে কালীপূজার দিন অমাবস্যার সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত এই ‘কলাচিকিৎসা’ দিয়ে আসছেন কয়েকজন কবিরাজ। প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াতে নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে লুকিয়ে এই চিকিৎসা দেওয়ার খবর পেয়ে তা বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা সুলতানা।
রোববার সন্ধ্যায় থেকে দেখা যায়, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তির আশায় এই কলা খেতে এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার কয়েক’শ মানুষ ভিড় করেছেন উপজেলার শালেশ্বর গ্রামের আব্দুল মতিনের বাড়িতে।
কবিরাজ মিজানুর রহমানের নিজ বাড়ি কলসনগর গ্রামে হওয়ায় প্রশাসনিক ঝামেলার শঙ্কায় পার্শ্ববর্তী এই গ্রামে চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে জানা যায়। আব্দুল মতিন সম্পর্কে মিজানুর রহমানের দুলাভাই। পারুল বেগমের নিকট থেকে তিনি এই চিকিৎসা শিখেছেন বলে জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে উপজেলার গোপালপুর গ্রামের স্বামী আবু বকরের বাড়িতে পারুল বেগম (৬০) নামে এক নারী বছরে এক দিন কলার সঙ্গে ‘গাছগাছড়া’ দিয়ে ‘কলাচিকিৎসা’ করতেন। তিনি উপজেলার এবি ইউনিয়নের কলসনগর গ্রামের সবিউল্লাহর মেয়ে। কিন্তু ‘কথিত চিকিৎসায়’ প্রশাসনিক বাধার কারণে গত চার বছর ধরে তিনি বাবার বাড়ি কলসনগরে ‘কলাচিকিৎসা’ দিচ্ছিলেন। এছাড়া উপজেলার গোপালপুর বাজার এলাকায় মাইকেল নামের এক ব্যক্তি একই ‘চিকিৎসা’ দেন বলে জানা যায়। তিনিও পারুল বেগমের শিষ্য।
কবিরাজ মিজানুর রহমান বলেন, তিনি শালেশ্বর মসজিদের ইমাম। আমাবশ্যার রাতের সাথে অনেক কিছু জড়িত আছে। গাছগাছড়ার সাথে বছরে একবার এই কলা চিকিৎসা দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী রোগীদের এই জিনকলা, হাঁসের মাংস ও হাঁসের ডিম সারা জীবনে আর খাওয়া যাবে না। উপকার পাওয়া বা না পাওয়া আল্লাহর ইচ্ছা। তবে উপকার না হলে এত দূর থেকে মানুষ কেন আসবে? অবশ্যই উপকার পাচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর গ্রামের জান্নাতুল বেগম বলেন, ভেতরে গাছ দিয়ে একটা জিনকলার চার ভাগের এক ভাগ খাওয়ানো হচ্ছে। গতবার কলা খেয়ে একটু রোগ থেকে আরাম পেয়েছেন। তাই আবার এসেছেন। এ বছর এক টুকরা কলার দাম ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। গত বার ছিল ৩০ টাকা।
শ্বাস কষ্টের রোগী পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা আজগর আলী, শালেশ্বর গ্রামের ইন্তাজ আলী বলেন, কবিরাজ অমাবস্যার সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত রোগীদের এই কলাচিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার জন্য তাঁর কাছে তিন বছর এই কলা চিকিৎসা নিতে হয়।
পারুল বেগমের স্বামী আবু বকর বলেন, তাঁর স্ত্রী ২০০৫ সাল থেকে এই চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। মানুষের পিড়াপিড়িতে বাধ্য হয়ে এই চিকিৎসা দেন।
এবি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আসলাম বলেন, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তির আশায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ শালেশ্বর গ্রামে একটি বাড়িতে ভিড় করেছেন বলে জানতে পারেন। ইউএনও-র নির্দেশে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছেন।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক সুরুজ্জামান শামীম বলেন, কলার সঙ্গে গাছগাছড়া খেলে শ্বাসরোগ ভাল হয় এমন তথ্য প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত নয়। ভিত্তিহীন এ ধরণের চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষকে প্রতাড়িত করা হচ্ছে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, কথিত কলা চিকিৎসার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের মাধ্যমে বন্ধ করা হয়েছে। এর পরেও গোপনে কোন রকম অপচেষ্টা করা হলে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।