ওসমান গনি বেড়া (পাবনা) ::
পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনা নদীর বিভিন্ন জায়গায় জেগে ওঠা চরে বিনাচাষে ও বিনা খরচে উৎপাদিত শন,বন,দুমচা বিক্রি করে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অর্ধ শতাধিক কৃষক। জনা যায়, উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকা পেচাকোলা, মালদাহ পাড়া, নয়নপুর, নাকালিয়া, হরিরামপুর, চর সাঁড়াশিয়া,চর নাগদাহ, চর সাফুল্লাহ, চর কল্যাণপুর মৌজা সহ বিভিন্ন এলাকার সীমানা সংলগ্ন নদীর পাড় ঘেঁষে জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ ছাড়াই বিনা খরচে প্রাকৃতিক ভাবে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদিত হয়েছে শন,বন,দুমচা নামের নল জাতীয় গাছ । এসব গাছ কেটে স্থানীয় এলাকায় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করছে ওই এলাকার অনেক কৃষক।নদীর তীরবর্তী ও চর এলাকার লোকজন জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের এক দেড়মাস আগেই প্রাকৃতিক ভাবে এই শন,বন,দুমচার বীজ বা ফুল উড়ে এসে পড়ে বিভিন্ন চরাঞ্চলে। কিছু দিনের মধ্যে ওইসব বীজ বা ফুল থেকে খুব দ্রুত এই নল জাতীয় গাছ বেড়ে ওঠে।তিন চার মাসের মধ্যে এসব শন,বন,দুমচা আট থেকে বার ফুট লম্বা হয়ে ওঠে ও ফুল ফোঁটে। ফুল ফোঁটার পর এসব নল জাতীয় গাছ পরিপক্ক হয়ে তা ব্যবহার ও বিক্রির পর্যায়ে এসে পড়ে। স্থানীয়রা বলেন, চরাঞ্চলে এসব উৎপাদনের জমি অধিকাংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে সরকার জমির খাজনা-খারিজ ও রেজিষ্ট্রি বন্ধ রাখায় এসব জমিজমা নদী সিকস্তি হয়ে পড়েছে। যার ফলে এক শ্রেণির প্রভাবশালী লোকজন জমির প্রকৃত মালিককে সামান্য কিছু নামমাত্র অর্থ দিয়ে আবার কাউকে না দিয়েই এসব কেটে নিয়ে বিক্রি করে আসছে । স্থানীয়রা আরো জানান, তিন থেকে চার টাকা আটি (তিন মুঠো পরিমাণ) দর মিটিয়ে শ্রমিকদের মাধ্যমে কেটে এলাকার বেপারিদের কাছে সাত আট টাকা আটি দরে বিক্রি করছে। বেপারিরা তা ক্রয় করে পুনরায় বাইরের বেপারিদের কাছে ১৫-২০ টাকা আটি দরে বিক্রি করে দিচ্ছে । প্রতিদিন একজন শ্রমিক কমপক্ষে দুই শ’থেকে আড়াই শ’ আটি শন-বন কাটতে পারে। প্রায় দুই দশক ধরে উপজেলার বিভিন্ন চর ও নদীর তীরে পরিত্যক্ত স্থানে এসব নল জাতীয় গাছ বিনাচাষে ও বিনা খরচে জন্মে আসছে। যেসব চর এলাকায় এসব জন্মে সেসব জায়গার প্রকৃত মালিকরা ঝামেলা মনে করে এসব গাছের দাবি নিয়ে কাটতে বা বিক্রি করতে যায়না। যাঁরা কাটে বা বিক্রি করে তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো জায়গা জমি নেই বলে স্থানীয়রা জানান। বর্তমানে শন,বন,দুৃমচা ও বিক্রির ভরা মৌসুম চলছে । পেচাকোলা গ্রামের মজিবর শেখ বলেন, গত দুই দিনে চর থেকে শ্রমিক দিয়ে প্রায় ১০ হাজার আটি শন,বন,দুৃমচা কেটেছি ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রতি আটি আট টাকা দরে বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা জমেছে। একই গ্রামের আমির শেখ বলেন, এ বছর এ পর্যন্ত শন,বন,দুমচা বিক্রি করে প্রায় তিন লাখ টাকা পেয়েছি। নজরুল শেখ নামের আরেক কৃষক বলেন, গত বছর দুই পার্টনার মিলে ১৬ লাখ টাকার খরচ করে কেটে ২০ লাখ টাকার শন,বন,দুমচা বিক্রি করেছিলাম এ বছরো সেই আশা আছে। শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শুধু পেচাকোলা গ্রামেই আরও ১৫-২০ জন কৃষক প্রতিবছর এসব শন,বন,দুমচা কেটে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো,সিল্টু শেখ এ প্রতিবেদককে জানান, এসব শন,বন,দুমচা দিয়ে ঘর দরজা পরিস্কার করার জন্য ঝাড়ু, গ্রাম গঞ্জের বাড়ির আঙিনা ও ঘরের বেড়া,এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পান উৎপাদনকারী এলাকা যেমন রাজশাহীর তাহের পুর, মোহনগঞ্জ,পাকুরিয়া,মাদারিগঞ্জ,নাটোরের বনপাড়া,কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা সহ দেশের বিভিন্ন পান উৎপাদনকারী এলাকায় পানের বরজে এসব ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা বলেন বিক্রি মৌসুমের সময় এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেপারিরা এসব এলাকায় এসে লাখ লাখ আটি শন,বন,দুমচা কিনে নৌকা, ট্রাক ট্রলি সহ বিভিন্ন যানবাহনে নিয়ে যান