বিএনপির চরিত্র দেশের উন্নয়নকে ধ্বংস করা- প্রধানমন্ত্রী

// সাজ্জাদ হোসেন সাজু, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি- 

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বিএনপির চরিত্র হচ্ছে দেশের উন্নয়নকে ধ্বংস করা। এতিমের টাকা লুটপাট করে আত্মসাত করা। বিএনপির দল নেতা সাজা প্রাপ্ত পলাতক আসামি।  ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বললেন পদ্মা সেতু মাওয়া দিয়ে হবে না বলে বন্ধ করে দেন। দ্বিতীয়বার যখন পদ্মা সেতু করতে গেলাম স্বনামধন্য একজন ব্যক্তি মামলা করার পর সরকারের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়ায় হিলারি ক্লিনটনকে বলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে লোন বন্ধ করে দিয়ে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে দুর্নাম দিতে চেয়েছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করতে নয় দেশের উন্নয়ন করতে এসেছি। আমাদের নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। মনে রাখবেন বাংলাদেশের মানুষকে কেউ আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না।  

প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পৌরসভার ডাঃ কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত উন্নয়নমূলক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে একটি বিশেষ রেলে চড়ে ভাঙ্গায় এসে পৌঁছানোর পর বগাই রেল জংশন ভাঙ্গা মাওয়া হয়ে পদ্মাসেতূ দিয়ে রেল চলাচলের শুভ উদ্বোধন করেন। 

আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলে দেশে গনতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল হিসেবে আওয়ামীলীগের মুল লক্ষ্যে দেশের উন্নয়ন্মুখী কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষের কল্যাণ করা। আওয়ামীলীগ সরকার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুঃস্থ ও অসহায় ৮ লাখ ৪০ হাজার মানুষের জন্য বিনামূল্যে মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দিয়েছে। আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একটি মানুষ গৃহীন হয়ে থাকবে না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন নৌকা মার্কা এদেশের জনগণের উন্নয়নের মার্কা।  ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার নদী ভাঙ্গনের জন্য আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়বনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। শিক্ষা জাতির চাবি কাঠি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিনামুল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ, উপবৃত্তিসহ শিক্ষার জন্য সকল সুবিধা দিয়ে আসছি। আপনাদের সন্তানেরা ঠিক মত শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষের মত মানুষ হয়ে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেদিক লক্ষ্য রাখতে হবে। 

বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে নিজ নিজ ধর্ম পালন করার মধ্যে দিয়ে একটি ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পথ হাঁটছে সকল ধর্মের অনুসারীরা। সারাদেশে আওয়ামীলীগ সরকার ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছে। সকল ধর্মের মানুষের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কাজ করছি। 

বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোন খাদ্য খাটতি নেই। দেশে ১৭ থেকে ১৮ লক্ষ্য মেট্রিক টন খাদ্য শস্য মজুদ রয়েছে। বাড়ির আঙ্গিনায় এক ইঞ্চি জায়গা পতিত না রাখার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজের পরিবারের সুষম খাদ্যর যোগানে চাষাবাদ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা সেই নেতার আদর্শে দেশ পরিচালনা করে আসছি। কৃষকদের জন্য আমরা ভুরতুকি দিয়ে তাদের পাশে রয়েছি। কৃষি কাজের উন্নয়নে ও কৃষকদের সুবিদারথে জমিতে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফসল মাড়াই করে ঘরে তলার কাজ মেশিন দিয়ে করতে পারছে। এতে ফলনের উন্নয়ন হচ্ছে কয়েকগুণ বেশী। 

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। অনেক বিদেশি সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে এ রকম বিধ্বস্ত একটি দেশ,কোন সম্পদ নাই, আপনি কীভাবে দেশ গড়বেন? আপনারা জানেন জাতির পিতা কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, আমার মানুষ আছে। আমার দেশের মানুষ দিয়ে আমি দেশ গড়ব। বাংলাদেশের মানুষের উপর আমারও ভরসা আছে বলে আমি বলতে পারি আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা এনেছে। বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে ফরিদপুরসহ সারা বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ফরিদপুরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আড়াইশ বেডের থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করেছি। ফরিদপুরের মানুষের অনেক দিনের আশা একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ইনশাআল্লাহ আমি আগামীতে সরকারে আসতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব।     

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, যে কোন ত্যাগ তিতিক্ষা উপেক্ষা করে রাজপথ সারাদেশের যুবলীগ নেতাকর্মীদের দখল রাখতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবার নির্বাচিত করে গণতন্ত্রের উন্নয়নের রাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। 

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন দেশে কোন মঙ্গা নেই। নেই কোন খাদ্য সংকট। তলাবিহীন সেই দেশ এখন সকল দিক থেকে পরিপূর্ণ। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মডেলের দেশ। এজন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে নিজের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য।  

পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ভাঙ্গার জনগণের কাছে আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গা সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগের সুব্যবস্থা করার মধ্যে দিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের রাজনীতির মাইলফলক সৃষ্টি করলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লা বলেন, ফরিদপুর চারটি আসনে আমাদের প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদেরকে মনোনয়ন দিবেন ইনশাল্লাহ তাদের বিজয় হবেই হবে। ফরিদপুরের সাথে ঢাকা ও দখিণা অঞ্চলের রেলযোগাযোগের নতুন অধ্যায়ের সূচনায় এবং ভাঙ্গায় আগমনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ধন্যবাদ জানান। 

ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি বলেন, গণতন্ত্রের মানস কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙ্গায় আসছেন আমরা গর্বিত। আমার ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে উন্নয়ন দিয়েছেন আমি নেত্রীর কাছে ভাঙ্গাবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান এমপি, শাজাহান খান এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  আফম বাহা উদ্দিন, মোস্তফা জালাল মহি উদ্দীন, শেখ নাঈম এমপি,  

উল্লেখ্য ঘড়ির কাটায় বেলা তিনটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি থাকতে মঞ্চে উঠেন বাংলাদেশের মা মাটি মানুষের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠতেই চারদিক থেকে জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা সরকার বারবার দরকার শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা স্থল। উপস্থিত লাখো জনতাকে হাত নারিয়ে শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশর সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা তিনটা এক মিনিটে মঞ্চে প্রধান অথিতির বক্তব্যে রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বক্তব্যের শুরুতেই ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের হারানো শোকাবহ ১৫ আগস্টের ভয়াবহ কাল রাত্রির স্মৃতিচারণ করেন। উপস্থিত জনসভা স্থলের আওয়ামী ভক্তরা নীরব নিস্তব্দ হয়ে পড়েন। কিছু সময়ের জন্য আবেগ আপ্লূত হন প্রধানমন্ত্রী। 

আমাদের দুই বোনের অভিভাবক বলতে” আপনারা” বাংলাদেশের জনগণই আমাদের ঠিকানা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফরিদপুরবাসীকে আমার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রেল লাইনের আওতায় এনে উন্নয়নের নতুন এক দ্বার খুলে গেল। ঢাকা থেকে রেলে করে আমি আপনাদের ভাঙ্গায় এসেছি। এদেশে অন্য কেউ কোনদিন এটা চিন্তা করতেও পারে নি। পদ্মা সেতু ও রেল যোগাযোগ সুব্যবস্থাই ফরিদপুরের জনগণকে আমার পক্ষ থেকে উপহার।