// হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কম বয়সীদের মধ্যেও কিন্তু বেড়েছে এই প্রবণতা। নারী-পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কিন্তু নারী ও পুরুষের আলাদা হয়। কারণ শারীরিক ভাবে, হরমোনগত ভাবে, পেশির গঠন ও অন্যান্য জৈবিক কারণে মহিলা ও পুরুষদের স্বাস্থ্যের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। তবে হৃদরোগের জটিলতা হতে পারে নারী-পুরুষ উভয়েরই। বিভিন্ন অবস্থায় এই রোগের-উপসর্গ আলাদা হতে পারে।
পুরুষদের তুলনায় নারীদের হার্টের আভ্যন্তরীণ প্রকোষ্ঠ গুলো ছোট। সেই সঙ্গে মেয়েদের হৃৎপিণ্ডের দেয়ালও পাতলা হয়। ফলে মেয়েদের হার্ট একজন পুরুষের হার্টের তুলনায় ১০ শতাংশ কম রক্ত পাম্প করে। যে কারণে নারীদের যদি কোনও কারণে মানসিক চাপ বাড়ে তাহলে কিন্তু তখন হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। পুরুষদের তুলনায় তখন মেয়েদের হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণ অনেক বেশি হয়। যে কারণে নারীদের হার্ট অ্যাটাক অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ও যদি নারীদের হার্টের সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে তাদের অনেক বেশি যত্ন নিতে হয়। মেয়েরা যদি একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন সেখান থেকে তাদের সুস্থ করে তোলাও বেশ জটিল হয়ে থাকে।
হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণ
রক্তনালী সংকুচিত বা ব্লক হয়ে গেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। হার্ট অ্যাটাকে সাধারণত সবার যে ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দেয় সেগুলো হল,
বুকে ব্যথা বা বুকে অস্বস্তি বা চেপে ধরার অনুভূতি। যা ৩০ মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
মাঝারি শারীরিক পরিশ্রমের পরে শ্বাস নিতে অসুবিধা অনুভব করা।
ঘাড় ও চোয়ালে ব্যথা। এ ছাড়া হাতে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, অসাড়তা ও দুর্বলতা।
চরম ক্লান্তি।
অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত বা ধীর।
মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
নারী ও পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সব সময় এক হয় না। ‘দ্য ল্যানসেট ডিজিট্যাল হেলথ’-পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা তেমনটাই জানাচ্ছে।
হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। খোঁজ নিলে জানা যাবে, প্রতিবেশী, সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজনের অনেকেই হৃদরোগে ভুগছেন। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, প্রতি বছর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাটি কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। প্রচলিত একটি ধারণা আছে যে, নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ধারণা ভুল। পুরুষ ও নারী উভয়ের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সমান। দৈনন্দিন জীবনের কিছু অনিয়ম হৃদরোগ ডেকে আনে। তাই ঝুঁকি এড়াতে দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলা হয়। জীবন যদি নিয়মে বাধতে পারেন তা হলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা এড়ানো যাবে।
নিয়ম মেনেও যে সবসময় হার্ট অ্যাটাক আটকানো যায়, তা নয়। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হওয়াটা জরুরি। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যাবে, সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও তত বাড়বে। তাই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি। পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি সব সময় এক হয় না।
নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ হল নিশ্বাসের কষ্ট। শ্বাসবন্ধ হয়ে আসা হচ্ছে নারীদের হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম উপসর্গ। সেখানে পুরুষদের বুকে ব্যথার সমস্যা হলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি। তবে উভয়ের ক্ষেত্রে দরদর করে ঘাম হওয়াটা সাধারণ লক্ষণ। নারীর ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মূলত ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, কাঁধ ও ঘাড়ে ব্যথার মতো উপসর্গগুলোই প্রকট হয়। পুরুষদের যে এই লক্ষণগুলো হয় না, তা নয়। তবে হবেই এমনও নয়। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ও বুকে ব্যথা— পুরুষের হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ এগুলো।
একটা বয়সের পর নারীদের ঋতুবন্ধ হয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ঋতুবন্ধের আগের ও পরের উপসর্গের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো গুলিয়ে ফেলেন অনেকেই। এতেই বাড়ে বিপদের ঝুঁকি। ঋতুবন্ধের পর হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ ঋতুবন্ধের পর উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের আশঙ্কা অনেক বেশি। হৃদরোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে এই সমস্যাগুলি। তাই ঋতুবন্ধের আগে কিংবা পরে, যখনই এই সব উপসর্গ অনুভব করবেন, ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।