এবাদত আলী
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার পাবনা জেলা প্রসশাসনের আয়েজনে ও পাবনা জেলা পরিষদের সহযোগীতায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সুর্য সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।
পুর্বের নির্ধারিত কর্মসুচি অনুসারে আমরা সেই সংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে সকাল সকাল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পাবনা জেলা ইউনিট কমান্ড কার্যালয়ে উপস্থিত হলাম। এখান থেকে সকলে মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে যাওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গিয়ে দেখা পেলাম একাত্তুরের রণাঙ্গনের সাথীদের। তার মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কবি আবুল কালাম আজাদ বাবু, পাবনা সদর উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাসেম বিশ্বাস, সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান রঞ্জু, কার্য নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক আব্দুল জব্বার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আজিজুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী রঞ্জু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর হাসেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মুক্তার প্রমুখ।
পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্র আব্দুল হামিদ সড়ক ধরে মুক্তিযুদ্ধের পতাকা হাতে শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মিছিল করে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিতে দিতে আমরা সভাস্থলে গিয়ে হাজির হলাম।
অনুষ্ঠানের স্থান পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যলয় প্রাঙ্গনে “দুর্জয় পাবনা”র পাদদেশে । এই সংবর্ধনার জন্য বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। সুসজ্জিত মঞ্চে ব্যানার টাঙানো হয়েছে।
পাবনা জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম. আব্দুর রহিম পাকন এবং পাবনা জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব শুরু থেকেই সকলের খোঁজ খবর নিচ্ছিলিনে। কারণ পাবনা সদরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বেশ কিছু
মতবিরোধ বা মতপার্থক্য রয়েছে। মুলত তারা দুভাগে বিভক্ত। আর এটি সৃষ্টি করেছেন কতিপয় স্বার্থন্বেষী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একদল মনে করেন সেসময় যারা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা কোন মুক্তিযোদ্ধা নয়। অথচ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বা জামুকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকুতি প্রাপ্ত এবং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাময়িক সনদ, সরকারি গেজেট লাল মুক্তি বার্তায় এবং এম আই এস এ তাদের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে এবং তারা মাসিক সন্মানি ভাতাসহ সরকার থেকে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। কিন্তু ভারতীয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মধ্য হতে কতিপয় ব্যক্তি স্থানীয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে সরকারের গেজেট বাতিল ও মাসিক সন্মানি ভাতা বন্ধ করার জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিযোগ উত্থাপন করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বা জামুকা’য় দরখাস্ত দাখিল করায় তাদের ভাতা বন্ধ রয়েছে।
এ তালিকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন। ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ওমৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যগণ এক জোট হয়ে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর স¥ারক লিপি প্রদানসহ সরকারের নিকট দাবি উত্থাপন করেছেন। পুনরায় তাদের মাসিক সন্মানি ভাতা চালুসহ পুর্বের ন্যায় সকল সুযোগ সুবিধা লাভের জন্য সরকারের নিকট ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসুচি পালনেরও হুমকি দিয়ে রেখেছেন। সংবর্ধনা প্রদানের আয়োজকরা বিষয়টি ওয়াকিবহাল। তাই তারা ভারতীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং স্থানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনার জন্য উভয়পক্ষকেই আহ্বান জানিয়েছেন।
আমি (এই প্রতিবেদক) একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আগে থেকেই আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। উপরন্ত পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার সুবাদে প্রেস গ্যালারিতেও আমার জায়গা ছিলো। তাই পাবনা পেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমানের পাশেই গিয়ে বসলাম।
নির্ধারিত সময়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন অনুষ্ঠানস্থলে এলেন। তার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সকলকে বরন করে নিলেন এবং কুশল বিনিময় করলেন। সেই সাথে প্রত্যেককে একটি করে লাল সবুজ সম্বলিত ক্যাপ বা টুপি উপহার হিসেবে প্রদান করলেন।
পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হেসেনের সভাপতিত্বে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত এবং গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সুচনা। শুরুতেই বক্তব্য দিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম বাবলু। এরপর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পাবনা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব, এরপর বক্তব্য দিলেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান। পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আতিয়ার রহমান, এরপর পাবনা জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারমান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন।
এরপর পাবনার পুলিশ সুপার আকবার আলী মুন্সী বক্তব্য দেন। সভাপতির সমাপনি বক্তব্য দেন পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন।
সবশেষে সংবর্ধনার আয়োজক পাবনা জেলা প্রসশাসন ও পাবনা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদেরকে বিশেষ উপহার প্রদান করা হয়। (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট তাং ২৪ /১ ২/২০২২