চারটি বিষয়ে শতভাগ নাম্বার অনাহারে থেকেও মোহনার অবিশ্বাস্য সাফল্য

ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি: দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনার সময় বাবাকে হারায় মোহনা রানী সূত্রধর। এরপর থেকে মোহনা ও তার নয় বছর বয়সী বোন পূজা সূত্রধরকে নিয়ে মহা বিপদে পড়েছিলেন মা মানজু রানী সূত্রধর। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সহযোগিতা ও ধার দেনা করে সংসার চালাতেন তিনি। খেয়ে ও না খেয়ে দিন চলত তাদের। এত দুরবস্থার মধ্যেও মনোবল হারাননি তিনি। দুই মেয়েকে পড়াশোনায় কোনরকম ঘাটতি হতে দেননি। ছোট মেয়ে মোহনা পিএসসি পরীক্ষায় মেধাবৃত্তি পায়। এরপর শহরের মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষ বিনা বেতনে মোহনার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক পারিশ্রমিক ছাড়াই তাকে গত পাঁচ বছর ধরে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। এ বছর মোহনা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ পাঁচ পেয়ে পাস করেছে।

তার প্রাপ্ত ১১৮৪ নাম্বারের মধ্যে চারটি বিষয়ে রয়েছে শতভাগ নাম্বার। মোহনা পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার পাঁচ নাম্বার ওয়ার্ডের কালীবাড়ি মহল্লার মৃত কাঠমিস্ত্রি উত্তম কুমার ষষ্ঠী সূত্রধর এর মেয়ে। মোহনার বড় বোন পূজা সূত্রধর শহরের সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সম্মান প্রথম বর্ষে অধ্যায়ন করছে। জানা যায়, মাথা গোজার এক টুকরো জায়গা ছাড়া কোন সম্পদ নেই শিক্ষার্থী মোহনার পরিবারের। বাবা উত্তম কুমার অন্যের দোকানে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। নয় বছর আগে স্ট্রোক করে মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি মারা যান। এরপর মা মানজু সূত্রধর অন্যের কাছ থেকে সেলাই মেশিন কিনে নিয়ে কাজ শেখেন। সেলাইয়ের কাজ করে কোনমত সংসার চালান তিনি। তবে সংসারের চরম অভাব অভাব অনটনের মধ্যেও মেধাবী মোহনা পড়াশোনা চালিয়ে যায়। মানজু সূত্রধর বলেন, ‘আমার মেয়ে ছোটবেলা থেকেই সব সময় বই নিয়ে বসে থাকতো। তার এত বই পড়ার নেশা দেখে সবাই অবাক হতো।

তারা বলতেন, এই মেয়ে ভালো কিছু করবে একদিন। এরপর পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পাওয়ার পর থেকেই স্থানীয় শিক্ষকরা বই খাতা কিনে দেওয়া সহ সব ধরনের সহযোগিতা করত। বিদ্যালয়ে ও প্রাইভেটের শিক্ষকরা বেতন নিতো না। কিন্তু এখন বাইরে পড়াতে গেলে টাকা পাব কোথায়। কেউ সহযোগিতা করলে তবেই ভালো কলেজে মেয়েকে ভর্তি করতে পারব। মোহনা সূত্রধর জানায়, বাবা মারা যাওয়ার পরে মায়ের কষ্ট দেখেছি। তাই পড়াশোনা করে মায়ের দুঃখ ঘোচাতে চাই। ভবিষ্যতে একজন সৎ ও আদর্শবান উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, অভাব অনটনকে জয় করে মোহনার এই ভালো ফলাফল অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা। তার উচ্চশিক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময়ই পাশে থাকবে।