হেমন্তেই ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের আগমন, কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারদিক


জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
হেমন্তের শিশির বিন্দুতে মাঠ ঘাটের ঘাস ও গাছ পালার রঙও এখন ধূসর প্রায়। শীতের আগমনী বার্তায় ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে ভোরের সোনারাঙা রোদ।
বিকেল পাঁচটা না বাজতেই পশ্চিমে ঢলে পড়ছে সূর্য। গোধূলী লগ্ন পেরিয়ে জলদিই নেমে আসছে সন্ধ্যা। ভোরের আলো ফুটতেই স্নিগ্ধ শিশিরে ভেজা সবুজ ধানের পাতাগুলো নুয়ে পড়ছে হাওয়ায়। সাতসকালে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় টের মিলছে, শিশির ভেজা ভোর যেনো জানান দিচ্ছে শীত এসেছে প্রকৃতিতে। সন্ধ্যার আগেই প্রকৃতিতে ভর করছে কুয়াশা। নেমে আসছে শীতের আমেজ। কার্তিকের শুরু থেকেই এমন শীতের আবহ দেখা গেছে দেশের উত্তরে হিমালয়ের কোলঘেঁষা ঠাকুরগাঁও জেলায়। জেলায় ক্রমেই কমছে বাতাসের আর্দ্রতা আর বাড়ছে হিমেল হাওয়ার ঠাণ্ডা পরশ। বর্তমানে দিনের বেলায় কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা থেকেই শীত অনুভূত হচ্ছে। রাত যত গভীর হয় ঠান্ডাও ততো বাড়তে থাকে। আর ঠাণ্ডার কারণে কাঁথা শরীরে মুড়িয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। সন্ধ্যা থেকে সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে রাস্তাঘাট ফসলের মাঠসহ চার দিক। এ কারণে রাস্তায় চলাচলকারী মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলা গরম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে ও ঘূর্ণীঝড় সিত্রাং হওয়ার পরদিন
থেকে জেলায় বেড়েছে শীত ও কুয়াশা। তাই অন্যান্যবারের চেয়ে এবার শীতের প্রকোপ বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। সদর উপজেলার জহিরুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, গতবারের চেয়ে এবার আরও আগেই আমাদের এই দিকে শীত শুরু হয়ে গেছে এবার। বিকাল থেকেই কুয়াশা হিমেল হাওয়া বয়। শীত অনুভূত হওয়ায় রাতে কেঁথা গায়ে নিতে হচ্ছে। মাদ্রাসার শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, যদিও আশ্বিনের শুরু থেকে শীত পড়া শুরু করেছে এদিকে তবে এবার ঘূর্ণীঝড় সিত্রাং হওয়ার পরদিন থেকেই সন্ধ্যা থেকে সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়া শুরু করেছে। তাই এবার হয়তো গতবারের তুলনায় শীতের প্রকোপ বেশি হতে পারে। আব্দুল খালেক নামে এক কৃষক জানান, রাতে ঘন কুয়াশায় ঠিকমত রাস্তা দেখা যায় না। আর সকাল ১০-১১ টা সময়ও মাঠের ঘাস ও ধান গাছ শিশিরে ঘাস ভেজা থাকছে।মোটরসাইকেল আরোহী খোরশেদ ইসলাম বলেন, এমনিতে সন্ধ্যায় হাটা চলা
করলে গরম কাপড় গায়ে দিয়ে বেড় হতে হচ্ছে। আর মোটরসাইলে চালাতে তো গায়ে জ্যাকেট, মাফলা ও হাত মুজা পরিধান করতে হচ্ছে নয়তো হাড় কাপানো ঠান্ডা অনুভূত হয়। প্রায় প্রতিবছর এ জেলায় শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় সরকারকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে সঠিকভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করার দাবি ও অনুরোধ জানান স্থানীয়রা। মজিবর রহমান নামে এক মসজিদের খাদেম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। এলাকায় তেমন কোন বর্ণাঢ্য ব্যক্তি নেই।
তাই সরকারকে বিনীত অনুরোধ করছি এলাকার প্রকৃত অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের শীতবস্ত্র দিয়ে শীতনিবারন করার জন্য। এছাড়াও রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ঠাকুরগাঁও একটি সীমন্তবর্তী জেলা ও হিমালয়ের কাছাকাছি জেলার অবস্থান হওয়ায় প্রতিবারে এখানে শীত আগেই শুরু হয়ে যায়। আমাদের জেলায় অনেক অসহায় দরিদ্র মানুষ আছেন যারা শীতের সময় শীতবস্ত্রের অভাবে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেন। তাই আমি সরকারকে অনুরোধ করবো এধরণের মানুষ গুলোকে শীতবস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার। তাছাড়ও যারা বিত্তবান আছে তারাও যেন শীতবস্ত্র দিয়ে এই মানুষ গুলোর পাশে থাকেন। শীতবস্ত্রের জন্য ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে ৫০ হাজার কম্বল ও ২০ লক্ষ টাকার একটি চাহিদা পাঠিয়েছেন ও বরাদ্দ এলেই সকলের সাথে সমন্বয় করে তা শতভাগ সঠিকভাবে বিতরণ করা হবে বলে জানান ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান।