ভাঙ্গুড়ায় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্রাকৃতির শহীদ মিনার

ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দেশ দেয়। এতে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় শহরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে ক্ষুদ্রাকৃতির শহীদ মিনার নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। শহীদ মিনার মূলত পাঁচ স্তম্ভের হলেও এ উপজেলার অধিকাংশ শহীদ মিনার তিন স্তম্ভের। আর্থিকভাবে সচ্ছল অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত এমন শহীদ মিনার নিয়ে সুশীল সমাজের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ৯৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় , ২টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, ৩টি টিবিএম কলেজ, দুইটি স্নাতক কলেজ, ৯টি দাখিল মাদ্রাসা, ২টি আলিম মাদ্রাসা ও ২টি ফাজিল মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজে পূর্ব থেকেই শহীদ মিনার ছিল। অন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত চার বছর আগে প্রশাসনের নির্দেশে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। তবে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে প্রশাসনের চাপে তাড়াহুড়াা করে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে  তিন স্তম্ভের শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণে বিদ্যালয়় তহবিলের টাকা ব্যয় করা হয়। তবে কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ এলাকাবাসী আর্থিক সহযোগিতা করে। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত শহীদ মিনার অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের তহবিলের টাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করে। এসব স্তরের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সুউচ্চ ভবন রয়েছে। এরপরও উপজেলা শহরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সহ অধিকাংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র পরিসরে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিম্ন মানসিকতা ও অনীহাকে দায়ী করেছেন সুশীল সমাজের লোকজন। 
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দেশ দেয়। পরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের চাপে ২০১৭ সালে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করে লোহার এঙ্গেল দিয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির শহীদ মিনার নির্মাণ করেন প্রধান শিক্ষকরা। সরকারি নির্দেশে তাড়াহুড়া করে কোনমতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় বলে অজুহাত দেখান প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তাই পরবর্তীতে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করে স্বাভাবিক আকৃতির শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে বলে সে সময় জানায় প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তবে এরপরে চার বছর পার হলেও ওই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার সাধারণ মানুষ। 


সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা শহরে অবস্থিত চারতলা ভবন বিশিষ্ট ভাঙ্গুড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজে চার-পাঁচ হাজার টাকা ব্যয়ে লোহার এঙ্গেল দিয়ে তৈরি ক্ষুদ্রাকৃতির শহীদ মিনারে প্রতিবছর ভাষা দিবস পালন করা হয়। একই অবস্থা সরকারি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। অথচ এই দুুুটি প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট আর্থিক স্বচ্ছলতা রয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের পাশের ভদ্র পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর ইউনিয়নের চরভাঙ্গুড়া খাঁ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাঙ্গুড়া দক্ষিণপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মন্ডতোষ ইউনিয়নের মন্ডতোষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন স্তরের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত শহীদ মিনার লোহার এঙ্গেল দিয়ে তৈরি করা তিন স্তম্ভের অতি ক্ষুদ্র আকৃতির।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোকসেদ আলী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন স্তম্ভ বিশিষ্ট শহীদ মিনারগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে করা হয়েছে। তাই দ্রুত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ স্তম্ভ বিশিষ্ট শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।


ভাঙ্গুড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বলেন, উপজেলা প্রশাসনের চাপে তাড়াহুড়া করে সে সময় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সরকারিভাবে বৃহৎ পরিসরে কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে বলে নতুন করে আর শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। 
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলী আশরাফ বলেন, সরকারি নির্দেশে সেসময় প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্প ব্যয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিল। এরপর থেকে এসব শহীদ মিনার সংস্কার কাজের মাধ্যমে উন্নয়ন করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও বিদ্যালয়ের প্রধানরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি। তবে বাস্তবায়নে ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্রাকৃতির শহীদ মিনার পরিবর্তন করতে উপজেলা সদরের সরকারি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবগত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী সমন্বয় মিটিংয়ে প্রস্তাবনা আকারে পেশ করা হবে।