বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির বাদশা হলেন মেয়র

 বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ইভিএম এ ভোট গ্রহণ শেষে বেসরকারি ফলাফলে বিএনপি মনোনিত ধানের শীষের প্রতিকের প্রার্থী রেজাউল করিম বাদশা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে বগুড়া পৌরসভায় বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আবারো নির্বাচিত হলেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৮২ হাজার ২১৭ টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জগ প্রতিকে আব্দুল মান্নান আকন্দ। তিনি পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৯০টি ভোট। প্রথমবারের মত নির্বাচনে নেমে তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। 

আর আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ওবায়দুল হাসান ববি তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ২০ হাজার ৮৯ টি। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বগুড়ার সহ সভাপতি মাওঃ আব্দুল মতিন হাতপাখা প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৬ হাজার ১৯১ টি ভোট।
বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে সব ভোট কেন্দ্রের ভোট সংগ্রহ করে ভোট গনণা করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহ এই বেসরকারি ফলাফল প্রকাশ করেন। 
বগুড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহ্ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শান্তিপূর্ন নির্বাচনে রেজাউল করিম বাদশা বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। প্রদত্ত ভোট সংখ্যা ছিল ১ লাক ৬৫ হাজার ১১২টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৫২৫টি। মোট বৈধ ভোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাক ৬৪ হাজার ৫৭৮টি। শতকরা হিসেবে ৫৯.৮৫ শতাংশ। পৌর এলাকায় মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭০টি। 
বিএনপির প্রার্থী রেজাউল করিম বাদশা প্রথমবারের মত তিনি বগুড়া পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলেন। এর আগে তিনি একবার পৌরসভায় নির্বাচন করলেও সেসময় তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। রেজাউল করিম বাদশার বিজয়ের মধ্যে দিয়ে বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির একক আধিপত্য বজায় থাকলো। রেজাউল করিম বাদশা বিপুল ভোটে জয়লাভ করায় বিএনপির সমর্থক ও ভোটারদের মাঝে বেশ উৎফুল্ল দেখা গেছে। ভোটের ব্যবধানে দিগুণভাবে এগিয়ে থাকার সংবদের পর থেকেই ধানের শীষের সমর্থকরা উল্লাস করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বেসরকারি ফলাফলে রেজাউল করিম বাদশা মেয়র নির্বাচিত হন। বর্তমানে বগুড়া পৌরসভার মেয়র আছেন বিএনপির আরেক নেতা এড: মাহবুবুর রহমান। তিনি বিগত নির্বাচনে টানা ৩বার বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন। 
এর আগে রোববার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়। ভোট গ্রহণকালে বিজিব, র‌্যাব, পুলিশ, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ম্যাজিস্ট্রেটগণ সার্বক্ষনিক টহল দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নিরাপত্তার কারণে বগুড়া পৌর নির্বাচনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোট উপলক্ষে ভোটার ও প্রার্থীরা উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটের দিন পার করেছে। বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ইভিএম এ ভোট গ্রহণ শেষে বেসরকারি ফলাফল প্রদান করা হয় বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে। 
বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে জয় পেয়েছেন ১নং ওয়ার্ডে শাহ মোঃ মেহেদী হাসান হিমু, ২নং ওয়ার্ডে তৌহিদুল ইসলাম বিটু, ৩নং ওয়ার্ডে কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্তী, ৪নং ওয়ার্ডে মতিন সরকার, ৫ নং ওয়ার্ডে রেজাউল করিম ডাবলু, ৬ নং ওয়ার্ডে পরিমল চন্দ্র দাস, ৭নং ওয়ার্ডে দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরু, ৮নং ওয়ার্ডে এরশাদুল বারী এরশাদ, ৯নং ওয়ার্ডে আলহাজ্ব শেখ, ১০ নং ওয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম আরিফ, ১১ নং ওয়ার্ডে সিপার আল বখতিয়ার, ১২ নং ওয়ার্ডে এনামুল হক সুমন, ১৩ নং ওয়ার্ডে আল মামুন, ১৪ নং ওয়ার্ডে এম আর ইসলাম রফিক, ১৫ নং ওয়ার্ডে আমিনুল ইসলাম, ১৬ নং ওয়ার্ডে আমিন আল মেহেদী, ১৮ নং ওয়ার্ডে রাজু হোসেন পাইকাড়, ১৯ নং ওয়ার্ডে লুৎফর রহমান মিন্টু, ২০ নং ওয়ার্ডে রুস্তম আলী, ২১ নং ওয়ার্ডে রুহুল কুদ্দুস ডিলু।
বগুড়া জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, ৭০ বর্গ কিলোমিটারের বগুড়া পৌরসভা ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৮ লাখের বেশি। নতুন ভোটার নিয়ে চলতি বছরে এসে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭০ জন। এরমধ্যে বগুড়া পৌরসভায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯০৬ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৬৪ জন মহিলা ভোটার রয়েছেন। ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে পৌরসভার ১১৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫৬টি কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। ঝুঁকিপূর্ন কেন্দ্রে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। 
এদিকে ভোটগ্রহণ কালে রোববার দুপরে বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বগুড়া কলেজ কেন্দ্রে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মুকুল ইসলামকে আটক করে বসিয়ে রাখা হয়। বেলা একটার দিকে ওই ভোটকেন্দ্রে মেয়র পদে নৌকার এজেন্ট হিসেবে থাকা আওয়ামী লীগ কর্মীদের জন্য প্যাকেট খাবার সরবরাহ করছিলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন। এক পর্যায়ে প্যাকেট ঘাটতি পড়ায় তিনি কেন্দ্রের বাইর থেকে খাবার নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে তাকে পুলিশ আটক করে। তবে কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের কারণ জানতে চাইলে সে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে যায়। এজন্য তাকে আটক করা হয়। 
বেলা সাড়ে ১১টার সময় নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করার অপরাধে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুর রহিমের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই সময় পৌর এলাকার সিটি বালিকা বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সামনে আব্দুর রহিমের সমর্থকরা শোডাউন ও জটলা করার চেষ্টা করছিলো। এতে সাধারণ ভোটারগণ ভোট প্রদানে বাাঁধার মুখে পড়ছিল। খবর পেয়ে এসময় আদালত পরিচালনা করেন গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রওনক জাহান। ভ্রাম্যমাণ আদালত কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুর রহিমকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অপরদিকে আরো দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে ১ হাজার টাকা জরিমানা দণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত। 
নির্বাচনে ফলাফলের পর বিজয়ীদের ফুলের মালা পরিয়ে ভোটার ওসমর্থকগণ উল্লাস করেন। কোথাও কোথাও আবার আতশবজি পুড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়। 
বগুড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহ্ জানান, ৫ম ধাপে রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বগুড়া পৌরসভার নির্বাচন ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভার ৫৬টি কেন্দ্রের ৫০টি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১৬ প্লাটুন বিজিবি, ২৭জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২৭টি মোবাইল টিম, ৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যাক র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে। ১১৩টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনে ২ হাজার ৬০৩ জন কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ করেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফয়সাল মাহমুদ জানান, শান্কিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।