বাকি বিল্লাহর সহায়তায় হাসি ফুটল প্রতিবন্ধী পিতার মুখে

প্রথম মা হওয়া প্রতিটি নারীর কাছেই অত্যন্ত আনন্দের। অনাগত সন্তানের কথা ভেবে এমন আনন্দে দিন কাটছিল গৃহবধূ পারুল আক্তারের (২০)। পারুলের স্বামী আসাদুল ইসলাম একজন জেলে। তাই সংসারে অর্থের অভাব থাকলেও নতুন অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিলেন ওই দম্পতি সহ পরিবারের সবাই। কিন্তু হঠাৎ করেই গত রবিবার পারুল পেটের অসহ্য যন্ত্রণায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান গর্ভের সন্তান পেটের মধ্যে পায়খানা করে দেয়ায় নানান জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই দ্রুত সিজারিয়ান অপারেশন করতে হবে। এতে খরচ হবে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেই মুহূর্তে হতদরিদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী পিতা আজিজল হকের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে গিয়েও টাকা যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে পারুলের চিকিৎসার খরচ যোগান দেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহ। এতে সকল দুশ্চিন্তা কেটে হাসি ফুটে আজিজল হকের মুখে।

 
জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলার পৌর শহরের মেন্দা কুটির পাড়া মহল্লার বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী আজিজল হক একটি সিনেমা হলে প্রচারণার কাজ করতেন। একযুগ আগে সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কাজ হারান আজিজল। এরপর থেকে মানুষের কাছে হাত পেতে কোনমতে সংসার চালান। এ অবস্থায় দুই বছর আগে মেয়ে পারুলকে জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আসাদুলের সঙ্গে বিয়ে দেন। আসাদুল পেশায় একজন জেলে। বিয়ের এক বছর পর পারুল গর্ভবতী হন। এরপর পারুলের গর্ভের সন্তান নয় মাস পূর্ণ হলে ১ মাস আগে তাকে পিতা আজিজল হক নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু গত রবিবার পারুল অসুস্থ হয়ে পড়লে সিজারিয়ান অপারেশন জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু টাকার যোগান দিতে পারছিলেন না স্বামী আসাদুল ও পিতা আজিজল। এমন সময় উপজেলা চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহর সহযোগিতায় পারুলকে ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের হেলথকেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। রবিবার সিজারিয়ান অপারেশনে সন্তান প্রসব করে পারুল। এরপর আজ বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহ র সহায়তায় ক্লিনিকের টাকা পরিশোধ করে পারুলকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রতিবন্ধী আজিজল হক বলেন, মেয়েকে নিয়ে অনেক বিপদে পড়েছিলাম। শেষে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাহায্যে মেয়েকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। চেয়ারম্যান সাহেবের যেন মঙ্গল হয়।
হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের পরিচালক আবদুল জব্বার বলেন, প্রসূতি পারুলের পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা ব্যয় অর্ধেক টাকা ছাড় দেয়া হয়। শুধু ঔষধ ও ইনজেকশনের খরচ নেয়া হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহ বলেন, টাকার অভাবে প্রসূতি পারুল ও নবাগত সন্তানের চিকিৎসা হবে না এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই বিষয়টি জানার পর টাকার যোগান সহ সব সময় খোঁজখবর রেখেছি। উপজেলার প্রতিটি মানুষের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।
ফটো ক্যাপশন: প্রতিবন্ধী পিতা আজিজল হকের হাতে টাকা দিচ্ছেন চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহ।