শফিক আল কামাল (পাবনা) ॥
পাবনার চাটমোহরে (হেবজো ৩ প্যারা পড়া) ৯ বছরের পুরুষ শিশু শিক্ষার্থীকে বলৎকারের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের হামিউস সুন্নাহ কাছিমুল উলুম কোয়ামী মাদ্রাসা’র শিক্ষক আব্দুর রহমান জোর পূর্বক পুরুষ শিশুটিকে বলৎকার করেছে বলে অভিযোগ পরিবার ও স্বজনদের।
পরিবার ও স্বজনদের সুত্রে জানা যায়, ৯ বছরের শিশুকে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পড়াশোনার জন্য ১ বছর আগে চাহটমোহর হামিউস সুন্নাহ কাছিমুল উলুম কোয়ামী মাদ্রাসা’য় ভর্তি করেন। নিয়মিত পড়াশোনা করে আসছিল তাদের শিশু সন্তানটি। গেল বছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে খবর পায় তাদের শিশু সন্তান অসুস্থ। কিন্তু মাদ্রাসায় গিয়ে সহপাঠীদের কাছে শুনতে পায় তাদের শিশুকে বলৎকার করা হয়েছে। এ ঘটনায় যেন জানাজানি না হয় তার দুই সহপাঠীকে মাদ্রাসা থেকে তাদের জন্মস্থান গাইবান্ধা শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর শিশুর পরিবারের সদস্যরা মাদ্রাসায় একটি ভেতরের রুমে নিয়ে বিষয়টি সভাপতি ও স্থানীয় গ্রাম প্রধানদের নিয়ে সুরাহা করতে বসে। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুর রহমানকে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন গ্রাম প্রধানরা। কিন্তু বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন না পেয়ে বিষয়টি হান্ডিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন কে জানানো হয়। চেয়ারম্যান শিক্ষার্থী বিষয়ে কোন বিচার করতে অপারগতা প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে শিশুর বিচারের জন্য পরামর্শ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সৈকত ইসলাম প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য চাটমোহর থানাকে নির্দেশনা দেন। কিন্তু চাটমোহর থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। শিক্ষক আব্দুর রহমান বহুল তবিয়তে এখনও মাদ্রাসা’র চাকুরিতে বহাল রয়েছেন।
বলৎকারের অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্তমূলক। শিশুটি ঠিক মতো পড়াশোনা করতে চায় না। পড়াশোনা বাদ দিতেই সে এমন তালবাহাণা করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
পানাকুড়া মাদ্রাসার সভাপতি মো. আলতাফ হোসেন বলেন, শিশুটি এর পূর্বেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। শিক্ষক ও শিশু পারিবারের মধ্যে ব্যাক্তিগত শত্রুতা থেকে এটা হতে পারে।
শিক্ষার্থীর পিতা (ছদ্দনাম) আব্দুল কুদ্দুস (৪৫) বলেন সাংবাদিকের কাছে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, আমার নিঃশ্বাপ শিশুকে এভাবে বলৎকার করতে পারে এটা বিশ্বাস করতে পারি না। শিশুটি কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ ও নির্বাক হয়েছিল। আমি মানুষের মাঝে যেতে পারি না। মাদ্রাসা কমিটির কাছে বিচারের জন্য গেলে তারা কোন ব্যবস্থা নেই নি। আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে শিশু বলৎকারের উপযুক্ত বিচার চাই।
শিক্ষার্থীর মামা বাঁধন হাসান বাবু (৩০) বলেন, আমার ভাগনে কে মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুর রহমান বলৎকার করেছে। আমরা মাদ্রাসার সভাপতি ও স্থানীয় প্রধানদের কাছে বিচারের জন্য যাই তিনি কোন উদ্যোগ নেননি। চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানায় বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু ঘটনার একমাস পার হয়ে গেলেও থানা এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেন নি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
চাটমোহর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান (বর্তমানে ডিবি পাবনা কার্যালয়ে বদলি) জানান, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছি। ছেলেটি প্রকৃতপক্ষে খারাপ। এর আগেও তার কারণে প্রধান শিক্ষকে অপসারণ করা হয়েছে।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সৈকত ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানতে পারার পর আমি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাটমোহর থানাকে নির্দেশনা দিয়েছি।
৯ বছরের পুরুষ শিশু শিক্ষার্থীকে বলৎকারের ঘটনা মাদ্রাসার সভাপতি, স্থানীয় প্রধান ও পুলিশের এমন বিবৃতি এবং ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সবার হৃদয়ে। আপনি যদি ঐ কোমলমতি শিশু সন্তানটি বাবা হতেন, তবে কি করে পারতেন এমন অবান্তর অযৌক্তিক কথা বলতে? আসুন শিশু ও নারীদের স্পর্শকাতর বিষয় ও বিপদে সাহায্য করতে না পারি অন্তত উপহাস না করি।