সঞ্জু রায়:
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সাংস্কৃতিক কূটনীতির এক প্রাণবন্ত প্রদর্শনীতে ঢাকা-ভিত্তিক খ্যাতিমান নৃত্য বিদ্যালয় ‘কল্পতরু’র ৯ সদস্যের একটি দল ভারতের মর্যাদাপূর্ণ ‘বালি যাত্রা উৎসব ২০২৪’-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে।
এই উৎসবটিকে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক মেলা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি প্রতিবছর ভারতের ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ থেকে ২২ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সাত দিনব্যাপী এই উৎসবটিতে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা ও স্লোভাকিয়ার প্রসিদ্ধ সাংস্কৃতিক দলসমূহেরও অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। ওড়িশা রাজ্য সরকার বাংলাদেশি নৃত্যদলটিকে পরিপূর্ণ অতিথেয়তা প্রদান করে।
ভারতে পৌঁছানোর পর, ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে বাংলাদেশের শিল্পীগণকে ঐতিহ্যবাহী রীতিতে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। সাধনার সহযোগী সংগঠন ‘কল্পতরু’ নৃত্য বিদ্যালয়ের নয়জন শিল্পী এই উৎসবে চমৎকার সব পরিবেশনা উপস্থাপন করেন, যেগুলোর মাঝে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গানের অনুপ্রেরণায় নির্মিত নৃত্য পরিবেশনাসমূহ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁদের পরিবেশনাগুলো ছিল ঐতিহ্যবাহী ও সমসাময়িক উপাদানসমূহের সুনিপুণ সংমিশ্রণ, যা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তৃণমূল নৃত্য ‘লাঠিখেলা’ ও ‘রায়বেশে’-এর শক্তিশালী মার্শাল আর্ট প্রদর্শনীর মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পায়।
এই ‘বালি যাত্রা’ উৎসব দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রতীক। এই উৎসবটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান অভিন্ন ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির অটুট বন্ধনকেও তুলে ধরে।
‘কল্পতরু’-র অধ্যক্ষ ড. লুবনা মরিয়ম এই উৎসবে দলটির অংশগ্রহণ ও পরিবেশনার বিষয়ে গর্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সুগভীর ও বহুমুখী। আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু সেটা আমাদের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করতে পারে না।”
আর এই আয়োজন প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা এই উৎসবে বাংলাদেশি দলটির অংশগ্রহণকে এই দুই দেশের জনগণের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্কের আরেকটি উদাহরণ এবং তাঁদের অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি পারস্পরিক সহমর্মিতা ও গভীর সম্মানের প্রতিফলন হিসেবে বর্ণনা করেন, যা তাঁদেরকে একত্রে আবদ্ধ করে।