পুরুষের অর্ধেক পারিশ্রমিক পান চলনবিলের নারী শুটকী শ্রমিকেরা

সুদীর্ঘ কাল ধরে আমাদের দেশের শ্রম বাজারে নারী পুরুষের মজুরী বৈষম্য চলে আসছে । নারীরা কৃষি কাজের সূচনা করলেও বর্তমান সময়ে চলনবিল এলাকার শুটকী মাছের চাতাল গুলোতে প্রায় একই সমান কাজ করলেও একজন নারী শ্রমিক এক জন পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।
সরেজমিন চলনবিলের মহিষলুটি এলাকার একটি শুটকী চাতালে কথা হয় তাড়াশের পোমরুইল গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী আনেছা খাতুন, ফরিদের স্ত্রী শাপলা, জহির উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা, মৃত নাছির উদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম, মৃত ইনছোপ এর স্ত্রী সাজেদা এবং নওগাঁর আরিফের স্ত্রী মাফিয়া খাতুনের সাথে। তারা জানান, ভোরে ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্নার কাজ সেড়ে শুটকি চাতালে আসি। পুরুষ শ্রমিকেরা শুটকি ব্যবসায়ীর মাছ কেনায় সহায়তা করে। চাতালে মাছ আসার পর আমরা মাছ ধুয়ে লবন দিয়ে আবার ধুয়ে ফেলে পুরুষ শ্রমিকদের সাথে চাতালে মাছ তুলে দেই। সারা দিন তাদের সাথে মাছ উল্টিয়ে দেই। অবসরে শুটকি মাছ বাছাই করি। নারী ও পুরুষ শ্রমিকের কাজে সামান্য তফাত থাকলেও একজন নারী শ্রমিক একজন পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক পারিশ্রমিক পান। বর্তমান চলনবিল এলাকার শুটকি চাতালে একজন পুরুষ শ্রমিকের দৈনিক পারিশ্রমিক ৩শ টাকা হলেও একজন নারী শ্রমিক পাচ্ছেন ১শ ৫০ টাকা।
অপর একটি শুটকি চাতালে কথা হয় মহাশৈল গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী রাহেলা, ললিয়াকান্দি গ্রামের মৃত জোনাব প্রাং এর স্ত্রী আসমা খাতুন, হানেফ এর স্ত্রী মাজেদা ও মৃত হাতেম প্রাং এর স্ত্রী আছিয়া খাতুনের সাথে। এরা সহ নারী শুটকি শ্রমিকদের অধিকাংশই হত দরিদ্র পরিবারের সদস্য। অনেকে বিধবা। ভরণ পোষণের কেউ না থাকায় শুটকী মৌসুমে শুটকীর চাতালে কাজ করেন। অনেকে জানান, অভাবের সংসারে বসে না থেকে যা কিছু উপার্জন করি তাই লাভ। এতে পরিবারকে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারি। মুলত বাড়তি কিছু আয় করার জন্যই শুটকীর চাতালে কাজ করি আমরা। সকাল ৮ টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাই ১শ ৫০ টাকা। শুটকীর চাতালের রান্না, মাছ ধোয়া, লবন মেশানো, বানায় তুলে দেওয়া, মাছ উল্টে দেওয়া ও বাছাইয়ের কাজ সব করি। পুরুষ শ্রমিকেরা অতিরিক্ত কাজের মধ্যে ভোরে আড়ত থেকে চাতালে মাছ নিয়ে আসেন। একজন পুরুষ শ্রমিক প্রতিদিন ৩শ টাকা পারিশ্রমিক পেলেও আমরা তাদের অর্ধেক পারিশ্রমিক পাই।
মজুরী বৈষম্যের কারণ জানতে চাইলে শুটকি চাতাল মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, পুরুষ শ্রমিকেরা ভোর হওয়ার সাথে সাথে মাছের আড়তে চলে যায়। মাছ কেনায় সহায়তা করে। চাতালে মাছ নিয়ে আসে। এর পর চাতালে কাজ শুরু করে তারা। এজন্য পুরুষ শ্রমিককে বেশি পারিশ্রমিক দিতে হয়। পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরা অপেক্ষাকৃত পরে কাজে আসে। তাছাড়া এ বছর ব্যবসার অবস্থা ও ভাল নয়। তাই ইচ্ছা থাকলেও নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়াতে পারছি না।