পশ্চিম রেলের পাকশী বিভাগে পণ্যবাহী ট্রেনের আয় অর্ধেকে নেমেছে

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
রেলওয়ের পশ্চিম জোনের পাকশী বিভাগে পণ্যবাহী ট্রেনের আয় অর্ধেকে নেমেছে। বিগত ৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় হয়েছে এ বছর। পাকশী বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে আয় কমে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাকশী রেল বিভাগের অধীনে ৫৮৩টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এতে আয়ের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৮০ কোটি টাকা। অথচ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৯৪টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এতে আয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।
২০২২ সালে পণ্যবাহী ট্রেনে ১ লাখ ৯ হাজার ১৯২টি ওয়াগনে মালামাল পরিবাহিত হয় ২৫৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ কেজি। এবছর রাজস্ব আয় হয়েছিল ১২৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৩ হাজার ১৮৫ টাকা।
২০২১ সালে পণ্যবাহী ট্রেনে রাজস্ব আয় হয় ১৮০ কোটি ৭৪ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯৮ টাকা। ওই বছর ১ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৪টি ওয়াগনে মালামাল পরিবাহিত হয়েছে। এসব মালামালের ওজন ছিলো ৩৫৩ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার ৫০৮ কেজি। ২০২১ সালে রেলের পাকশী রেল বিভাগে মালবাহী ট্রেনে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয়। অথচ তিন বছরের ব্যবধানে ২০২৪ সালে মালবাহী ট্রেনের আয় নেমে হয়েছে মাত্র ৫০ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা আয় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ২০২৪ সালের শুরুতে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমদানি কমতে থাকে। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভারতের সাথে একমুখী বাণিজ্যের (আমদানি হলেও, রপ্তানি নেই) কারণে ট্রেনে পণ্য আমদানি কমে গেছে। এরমধ্যে চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে আমদানি সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরদী জংশনের রেলইয়ার্ডে ( মালগুদাম) মালবাহী রেক থেকে পণ্য উঠানো-নামানোর সেই ব্যস্ততা নেই। ফাঁকা আর শুনসান নীরবতা। এই কাজের শ্রমিকরা (কুলি) অলস সময় পাড় করছেন। ট্রাক ষ্ট্যান্ড ফাঁকা। ট্রাক,কাভার্ড ভ্যানসহ সড়কপথে পণ্য পরিবহনের কোন যানবাহন নেই। শ্রমিক আবেদ আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করলেও কয়েকমাস ধরে বসে আছি। সঞ্চয় যা ছিলো শেষ হয়েছে। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছি।

ঈশ্বরদী জংশনের সুপারিনটেন্ড মহিবুল ইসলাম জানান, জুলাই-আগস্ট থেকে ঈশ্বরদী জংশনে ভারত হতে পণ্য আমদানি কমে গেছে। সেপ্টেম্বরে কিছু মালামাল এলেও অক্টোবরে মালামাল আসেনি। নভেম্বরে এপর্যন্ত মাত্র দুই রেক মালামাল এসেছে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা একেএম নূরুল আলম বলেন, পণ্যবাহী ট্রেনে আয় কীভাবে বাড়ানো যায় এ বিষয়ে বাণিজ্য বিভাগ কাজ করেছে। ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ জানান, রেলপথে আমাদের দেশের সাথে ভারতের মালবাহী ট্রেনে পণ্য পরিবহন দীর্ঘদিন ধরে চলমান। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে মালবাহী ট্রেন কম এসেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালবাহী ট্রেনে পাকশী রেল বিভাগের আয় হয়েছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।